হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা পশুর মাংস খেলে ক্যানসার হয়?

18
হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা পশুর মাংস খেলে ক্যানসার হয়? হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা পশুর মাংস খেলে ক্যানসার হয়?

Published on: [post_published]

হালাল পদ্ধতিতে কোনো পশুকে হত্যা করা হলে তার মাংসে স্ট্রিকনিন নামক ঘাতক হরমোন প্রচুর মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে, যেটি ক্যানসারের জন্য দায়ী-এমন একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে । তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই।

গুজবেরউৎস

গত ১০ই অক্টোবর রাত ৯ টা ৪৪ মিনিটে Supriyo Live নামের আনভেরিফাইড পেজ থেকেএই ভিডিওটি আপলোড করা হয়।

মূল ভিডিওতে ভারতীয় একটি রেস্টুরেন্টে সরবরাহ করা “হালাল” মাংস এবং “ঝটকা” মাংস নিয়ে এক ক্রেতার সাথে রেস্টুরেন্ট কর্মীর কথোপকথন দেখা যায়। এখানে ক্রেতা দাবি করেন, আমার গলায় পৈতা রয়েছে । আমি (ধর্মবিশ্বাসের কারণে মুসলিম রীতিতে জবাই করা) হালাল মাংস খাবনা। আমাকে ঝটকা খাবার (এক কোপে পশুর দেহ থেকে মস্তক ছিন্ন করে মাংস প্রস্তুতের পদ্ধতি)দাও।

ভিডিওর কোথাও স্ট্রিকনিন নিয়ে কোনো কথা না থাকলেও ক্যাপশনে বলা হয়, আমাদের অজান্তে শুধু হালাল খাবারই খাওয়ানো হচ্ছে।রীতিমত বুক ফুলিয়ে।দেখুন প্রমাণ।

প্রতিবাদ করলাম বলে রেস্তোঁরার অন্য খদ্দেররা আমাকে বিদ্রুপ করল।

একটা সত্য জেনে রাখুন, হালাল পদ্ধতিতে কোনো পশুকে হত্যা করা হলে তার মাংসে স্ট্রিকনিন নামক ঘাতক হরমোন প্রচুর মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে।এই স্ট্রিকনিন হরমোন অধিকাংশ ক্যান্সারের নেপথ্য নায়ক।

এবার যত খুশী হালাল খান।

এই ভিডিওটাই পরবর্তীতে অনেকে শেয়ার করেন। যেমন –

ফ্যাক্টওয়াচের  অনুসন্ধান

স্ট্রিকনিন হরমোন এর খোজে

ডা. এম এ হালিম খান বলেন, হরমোন শব্দের অর্থ হলো প্রাণরস।আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম অন্তক্ষরা গ্রন্থি থাকে।এই গ্রন্থি গুলো থেকে রস (হরমোন)বের হয়।এই রস (হরমোন) গুলো যে জায়গায় বের হয়, তার কাছাকাছি কাজ করে অথবা দূরে গিয়ে কাজ করে।

বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত মানবদেহে ৬৪ টা হরমোন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ হরমোন গুলোর মধ্যে রয়েছে – Melatonin, Cortisol, Insulin , Progesterone , testosterone,  Estrogen ।

এদের মধ্যে স্ট্রিকনিন নামক কোনো হরমোন খুজে পাওয়া গেলনা।

তবে Strychnine নামে একটা বিষ এর সন্ধান পাওয়া গেল, যা ইদুর মারা বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি Strychnosnux-vomica নামক উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়।

যেহেতু এটি বেশ শক্রিশালী বিষ, তাই অনেক অপরাধের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন সাহিত্যেও এর উল্লেখ রয়েছে। সত্যজিত রায়ের লেখা যত কাণ্ড কাঠমুণ্ডুতে দেখা যায়, হিমাদ্রীর মৃত্যুর জন্য এই স্ট্রিকনিন বিষ দায়ী। উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে ফেলুদা জানায়, ‘বিষ, ডঃদিবাকর, বিষ! স্ট্রিকনীন! যার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে টেট্যানাসের প্রতিক্রিয়ার কোনো পার্থক্য করা যায়না…।

ক্যান্সার এর কারণ

মায়োক্লিনিক জানাচ্ছে, দেহকোষ এর মধ্যের ডিএনএ মিউটেশন এর কারণে ক্যান্সার কোষ এর জন্ম হয়। এই মিউটেশন হতে পারে জেনেটিক কারণে, অথবা পরিবেশ গত কারণে । পরিবেশ গত কারণের মধ্যে রয়েছে তেজষ্ক্রিয়তা, সূর্যরশ্মি , কার্সিনোজেন কেমিকাল , স্থূলতা , শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ,হরমোন ইত্যাদি। যেমন-estrogen এবং progesterone হরমোনের আধিক্যের কারণে স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ে

অধিকাংশ ক্যান্সারের নেপথ্য নায়ক স্ট্রিকনিন হরমোন- এই দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য ফ্যাক্টচেকারদের অনুসন্ধান

রিউমর স্ক্যানার এই গুজব অনুসন্ধান করে জানাচ্ছে, স্ট্রিকনিন নামে কোনো হরমোন নেই বরং এই নামে একটি কীটনাশক রয়েছে যার সাথে পশু জবাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিজ্ঞানপ্রিয় জানাচ্ছে, এখন পর্যন্ত হালাল উপায়ে জবাইকৃত পশুতে স্ট্রিকনিনের কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি।এমন তথ্য কোথাও কোনো গবেষণায় আসেনি।এবং স্ট্রিকনিনের বিষক্রিয়া (তথাকথিত স্ট্রিকনিন হরমোন) ক্যানসারের কারণ নয়।

সারমর্ম

আলোচ্য পোস্টে স্ট্রিকনিন এবং ক্যান্সার সম্পর্কে যে দাবি করা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ক্যাপশন যুক্ত পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.