হিন্দু হওয়ার কারণে লিটন দাস ক্যাপ্টেন হতে পারেন নি ?

18
হিন্দু হওয়ার কারণে লিটন দাস ক্যাপ্টেন হতে পারেন নি ? হিন্দু হওয়ার কারণে লিটন দাস ক্যাপ্টেন হতে পারেন নি ?

Published on: [post_published]

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাস “হিন্দু” হবার অপরাধে জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন হতে পারেননি — এই মর্মে একটি স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এখানে জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, লিটন দাস ইতিমধ্যে একটি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচে এবং বেশ কিছু প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে ।


গুজবের উৎস

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে



ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

একটু অগোছালো এই ফেসবুক পোস্টে বলা হয়-

হিন্দু হবার অপরাধে জাতীয় দলের ক্যাপটেন হতে পারেননি:

নাম – লিটন কুমার দাস

জন্ম – দিনাজপুর জেলা, বাংলাদেশ।

১.বাংলাদেশ ক্রিকেট এ কোনো হি ন্দু প্লেয়ার খেলবে না।

২. ভারতের দালাল

৩. কোন ম্যাচ খারাপ খেললে চরম হেনস্থা শিকার হতে হয়। এমনকি হিন্দু পরিবারগুলোও টার্গেট হয়ে যায়।

৪. লিটন দাসের দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা বার্তায় কমেন্টগুলো পড়বেন বাকিটা বুঝে যাবেন।

অথচ আজ এদের মুখ রক্ষা করল লিটন দাস,নাহলে 50 রানেই খেলা শেষ হয়ে যেত।

পাকিস্থান বাংলাদেশ এর সাথে ভারতের পার্থক্য এখানেই।ভারতের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন তো ছাড়ুন,রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত একজন মুসলিম হয়েছে। তথাকথিত সাম্প্রদায়িক মুসলিম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপির হাত ধরেই।

বাংলাদেশে কিছুই নেই এমনটা নয়, কট্টর মৌলবাদীদের খপ্পরে পরে এরা কখনোই ট্যালেন্ট কে কাজে লাগাতে পারেনি।

যাই হোক ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল লিটন কুমার দাসকে। আশা করব বাংলাদেশ এবার অন্তত এই হিন্দুকেই ক্যাপ্টেন বানানোর কথা চিন্তা করবে।

এই ফেসবুক স্ট্যাটাসটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে , এখানে ৪ টা অংশ রয়েছে। প্রথম অংশে দাবি করা হয়েছে ,  হিন্দু হবার অপরাধে লিটন কুমার দাস জাতীয় দলের ক্যাপটেন হতে পারেননি ।

দ্বিতীয় অংশে লিটন দাস সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে এক শ্রেণীর ক্রিকেট দর্শক বিভিন্ন সময়ে যা যা মন্তব্য করেছেন, সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে । এ সকল কটূক্তির মুখে দাঁড়িয়ে লিটন দাস সাম্প্রতিক ম্যাচে ভাল খেলেছেন, সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্ট্যাটাসের তৃতীয় অংশে ভারতের ক্রিকেট দল এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামোয় সংখ্যালঘুদের উপস্থিতির সাথে বাংলাদেশের সম পর্যায়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের তুলনা করা হয়েছে।

চতুর্থ এবং শেষ অংশে লিটন দাস এর প্রতি শুভকামনা জানানো হয়েছে।

এখানে , দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ অংশে লেখক তার নিজস্ব মতামত বা পর্যবেক্ষণই তুলে ধরেছেন। কিন্তু প্রথম অংশে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য ( fact) তুলে ধরেছেন, যে তথ্যটি যাচাইযোগ্য ( fact-checkable) .

এই তথ্যটি যাচাই করতে গিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, লিটন কুমার দাস অতীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে বেশ কয়েকবার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০২১ সালের ১লা এপ্রিল বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফরের সময় ৩য় টি- টুয়েন্টিতে নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আহত হলে লিটন দাস সেই ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন।

সেই ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখতে পাবেন এখানে

এই ম্যাচের ফলে লিটন দাস বাংলাদেশের ৭ম টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

লিটন দাসকে অধিনায়ক মনোনীত করার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তখন প্রচার করা হয়েছিল। যেমন দেখুন এখানে , এখানে

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিটন দাস। গত অক্টোবরে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে লিটন দাস অধিনায়কত্ব করেছিলেন।

গত জুন মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিডব্লিউআই প্রেসিডেন্টস একাদশ এর বিরুদ্ধে একটি ৩ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও লিটন দাস অধিনায়কত্ব করেছেন।

উল্লেখ্য , গত ২ জুন থেকে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান , এবং সহ-অধিনায়ক লিটন দাস। মূল অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে ম্যাচের বা সিরিজের মাঝে বিভিন্ন সময়েই সহ অধিনায়কের উপর দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব আসে।

কাজেই ‘লিটন জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন হতে পারেন নি’- এই তথ্যটি ভুল। কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে লিটন দাস বেশ কয়েকটি ম্যাচেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার অধিনায়ক হওয়ার পথে তার সংখ্যালঘু পরিচয় কোনো বাধা হয়ে দাড়ায়নি।

উল্লেখ্য, ২৮ বছর বয়সী লিটন দাসের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক ২০১৫ সালে। গত ৭ বছরে ৩৫ টি টেস্ট, ৫৭ টি ওয়ানডে এবং ৬৪ টি আন্তর্জাতিক টি টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.