সম্প্রতি “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে গোপন তথ্য দিলো সিইসি” – শীর্ষক দাবি সংবলিত একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। উক্ত ভিডিওতে এটাও দাবি করা হচ্ছে যে, ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের মতো একটি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে বলছেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এই পর্যায়ে সমীচীন হবে না।” তাছাড়া, পুরো সাক্ষাৎকারে তাঁকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসতে পারে বলে কোন মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবি যথাযথ কিনা তা যাচাই করতে আমরা উক্ত ভিডিওতে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সিইসি’র যে সাক্ষাৎকারকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেই সাক্ষাৎকারটি খুঁজে বের করি। ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রাপ্ত ২৯ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই সাক্ষাৎকারের ২৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে গিয়ে আমরা দেখতে পাই প্রশ্নকর্তা শতরূপা বড়ুয়া সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে জিজ্ঞাসা করছেন তিনি বাংলাদেশের মতো একটি দেশে নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রয়েজনীয়তা অনুভব করেন কিনা। এই প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল যে জবাব দিয়েছেন তা পাঠকদের সুবিধার্থে নিচে হুবহু তুলে দেওয়া হলো –
কাজী হাবিবুল আউয়াল:“এই বিষয়টা নিয়ে আমি খুব বেশি বলবো না। কারণ এটা একটি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত প্রশ্ন। এর উপর আরও জটিলতা বেড়ে গেছে। এই বিষয়ের উপর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের একটা রায় হয়ে গেছে। আর এই বিতর্কিত বিষয়টার মীমাংসা কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বকে করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যে কলহ, বিরোধ আছে সেখানে দূতিয়ালী করা আমাদের (নির্বাচন কমিশন) কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে এবং সংবিধানের অধীনে যে আইনগুলো হয়েছে ওর অধীনে নির্বাচনটাকে যেভাবে আয়োজন করা দরকার আমরা সেভাবে করব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে কি হবে না এটা নিয়ে আমি যেটা দেখতে পাচ্ছি বিগত ১০-১৫ বছর ধরেই আন্দোলন হচ্ছে এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডলে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেটা নিয়ে দেনদরবার করবেন, তারা বিষয়টাকে মীমাংসা করবেন এবং ওর ভিত্তিতে বিষয়টা কখনো যদি নিরুপিত হয়, পরিবর্তিত হয়, তখন সে পরিবর্তিত অবস্থায় নির্বাচন কেমন অবাধ হবে, সেটা তখন বোঝা যাবে। আমার তরফ থেকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ওর উপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না।”
তাছাড়া, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির শুরুতেই প্রশ্নকর্তার একটি প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বলতে শোনা যায় – “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনটাকে যেভাবে আয়োজন করা দরকার আমরা সেভাবেই করবো।” তবে মূল সাক্ষাৎকারটি দেখে বোঝা গেছে আলোচিত ভিডিওর শুরুর অংশটি কাজী হাবিবুল আউয়ালের দেয়া কোন বক্তব্য নয়। বরং উক্ত সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন জায়গা থেকে কেটে আনা টুকরো অংশ জোড়া লাগিয়ে সিইসির একটি বক্তব্য তৈরি করা হয়েছে, যা আসলে তিনি বলেননি।
এর আগে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের এই সাক্ষাৎকারটিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে একটি দাবি উঠেছিলো যে, তিনি বলেছেন অবৈধ নির্বাচনের দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে! তবে সেই সময় ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত দাবিটি যাচাই করে দেখেছিল এবং এর বিপরীতে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ খুঁজে না পাওয়ায় দাবিটিকে নাকচ করে দিয়েছিল। ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
অতএব, উপরের আলোচনা এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে — এমন কোন তথ্য দেননি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। বরং তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কোন মন্তব্য করাকে এই পর্যায়ে সমীচীন মনে করছেন না।
সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।