সম্প্রতি ফেসবুকে একটি তথ্য ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ৩১ সদস্য নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে এবং সরকার প্রধান হবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবিটির পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোনো বিধান নেই। সংবিধানের পরিবর্তন ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয় এবং সংবিধানের পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো ঘোষণাও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া ভিত্তিহীন দাবিগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ৩১ সদস্য নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হচ্ছে কি না এ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জানার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি- ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস থেকে ফেসবুকে ভাইরাল দাবিটির সমর্থনে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো কমপক্ষে ২৭ আগস্ট থেকে ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, এর পরেও বিভিন্ন সমাবেশে বিএনপির তরফ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানানো হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে বিএনপি কার্যালয়ে সামনে থেকে শুরু হওয়া বিএনপির পূর্বঘোষিত ‘তারুণ্যের রোড মার্চ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের ঘোষণা দেয়া হয়ে থাকলে এর পরেও বিএনপির পক্ষ থেকে আবার একই দাবি জানানো নিতান্তই অযৌক্তিক।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোনো বিধান নেই। ২০১১ সালের ১০ই মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। সুতরাং, সংবিধানের পরিবর্তন ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম বা মূলধারার সংবাদমাধ্যম থেকে সংবিধানের পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
উল্লেখ্য, শামা ওবায়েদ নামের একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে গত ২৮ আগস্ট ‘৩১ সদস্য নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে এবং সরকার প্রধান হবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস’ এমন একটি তথ্য শেয়ার করা হয়। এ ব্যাপারে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বাংলাভিশনকে নিশ্চিত করেন, এই ফেসবুক আইডিটি তার নয় বরং, তার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যটি ছড়ানো হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অস্তিত্বই যেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি সেখানে সরকারপ্রধান থাকাটাও বাস্তবসম্মত নয়। সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ভিত্তিহীন এই দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।