সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। যার ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ-সেনাবাহিনী রাজধানী ঘিরে ফেলেছে এবং গোটা শহরে কারফিউ জারি করেছে। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় এমন ঘটনার কথা নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ঢাকার কোন ঘটনার নয় বরং বগুড়া জেলা বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে বগুড়া জেলা বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচির ভিডিও। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
গত ৮ জুন ঢাকা জেলা বিএনপি মিছিল নিয়ে ‘অসহনীয় লোডশেডিংয়ের’ প্রতিবাদে ঢাকায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছিল। মিছিলটি পল্টনের চায়না টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে আরামবাগ মোড়ে পৌঁছালে তাদের পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়। কিন্তু সেখানে সেনাবাহিনীর কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যায়নি এবং ঢাকাকে ঘিরে ফেলার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, ৮ জুনের পরে ঢাকায় বিএনপির সাথে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর এখন পর্যন্ত আর কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে কি না এ সম্পর্কে জানার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট ঢাকা সহ ছয় বিভাগীয় শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। তৎকালীন বাংলাদেশের সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক সেই কারফিউ জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরে বাংলাদেশে আর এমন কারফিউ জারি করা হয়েছিল কিনা এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০০৭ সালের কারফিউ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া পোস্টে যে সংঘর্ষের ভিডিওটি দেখানো হয়েছে তা ঢাকায় ঘটা কোনো ঘটনা নয়। ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করে বিএনপির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ৮ জুন প্রাকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার সাথে ভাইরাল ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গত ৮ জুন দেশব্যাপী অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে বগুড়া জেলা বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে বগুড়া জেলা বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করতে গিয়েছিল। ভিডিওটি মূলত সেই সময়কার। অর্থাৎ ভিডিওতে দেখানো ঘটনাটি ঢাকার নয় বরং বগুড়ার।
অতএব সবকিছু বিবেচনা করে ভাইরাল পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।