“নির্বাচন অবৈধ এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে” – প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথা বলেছেন?

9
“নির্বাচন অবৈধ এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে” – প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথা বলেছেন? “নির্বাচন অবৈধ এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে” – প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথা বলেছেন?

Published on: [post_published]

সম্প্রতি “নির্বাচন অবৈধ এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে বললেন প্রধান নির্বাচক হাবিবুল আউয়াল” – শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের একটি প্রতিবেদনের কিছু অংশ ব্যবহার করে দাবিটি করা হচ্ছে। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ঐ প্রতিবেদনটিতে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটি সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে একা দায় নেবে না নির্বাচন কমিশন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেয়া সাক্ষাৎকারটির কোথাও তাঁকে অবৈধ নির্বাচনের দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে বলতে শোনা যায়নি। সাক্ষাৎকারে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে এর দায় সরকারের উপরও পড়বে এবং সরকার বলতে তিনি নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি কিংবা পদের নাম উল্লেখ করেননি। বরং তিনি সরকার বলতে বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, প্রভৃতির সমষ্টির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ভাইরাল পোস্টে শুধু প্রধানমন্ত্রীর উল্লেখ থাকায় ফ্যাক্টওয়াচ শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “আংশিক মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে। 

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

নির্বাচন অবৈধ এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে – প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এ ধরণের কথা বলেছেন কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে আমরা প্রথমে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে বের করেছি। কেননা উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির খন্ডাংশ ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নামে দাবিটি করা হয়েছিল। চ্যানেল টুয়েন্টিফোর কর্তৃক প্রকাশিত ঐ ভিডিও প্রতিবেদনটিতে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাৎকার মারফত জানানো হয়েছে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে এর দায় কেবল নির্বাচন কমিশনারের নয়। বরং সেই দায় সরকারের উপরও পড়বে। 

এরপর আমরা ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাক্ষাৎকারটি খুঁজে বের করি এবং পুরোটা শুনে দেখি। তবে ২৯ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের এই সাক্ষাৎকারের কোথাও তাঁকে অবৈধ নির্বাচনের দায়ভার প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে বলতে শোনা যায়নি। উক্ত সাক্ষাৎকারের ২৩ মিনিট নয় সেকেন্ড থেকে আমরা শুনতে পাই ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা’র সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বলছেন আগামী ০৭ই জানুয়ারির নির্বাচন যদি দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে তার দায়ভার তো নির্বাচন কমিশনারের উপর অনেকাংশে বর্তায় এবং এই নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন কিনা সেটাও জানতে চান। এই প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল যে উত্তর দিয়েছেন সেটা পাঠকদের সুবিধার্থে হুবহু নিচে তুলে দেয়া হলো –

কাজী হাবিবুল আউয়াল: “এইসব ব্যাপারে আমি কোন জবাব দিবো না। আমি মনে করি এটা খুব সঙ্গত প্রশ্ন নয়। আমরা আমাদের দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে যাবো। আমরা আশাবাদী যে সকলের প্রচেষ্টায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, এবং নিরপেক্ষ হবে। এই প্রত্যাশা আমাদের। নির্বাচন কমিশনের থেকে সেই চেষ্টা এবং প্রয়াসটা থাকবে। একই সাথে আমরা ঘুরে ঘুরে এই মেসেজ দিয়ে যাচ্ছি যারা নির্বাচনটি প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করবেন তারা যেন দায়িত্বের সাথে এই দায়িত্বটা পালন করেন। হ্যাঁ, তারা যদি দায়িত্বটা পালন না করার কারণে অনিয়ম হয় তাহলে কিছুটা দায়ভার তো আমাদের উপর এসে পড়বে। কিন্তু সার্বিকভাবে বা এককভাবে নির্বাচন কমিশনকে কোনভাবে দায়বদ্ধ করা যাবে না। এখানে সরকার একটা বড় জিনিস। সরকারের উপর আমাদের অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে। সরকারের যে পলিটিকাল উইল (Political will) বা রাজনৈতিক সদিচ্ছা তা সরকারের পক্ষ থেকে বারংবার ব্যক্ত করা হয়েছে যে এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, এবং নিরপেক্ষ হবে। আমি বলছি না, সরকার [বলছে]। আমাদের আইনে রয়েছে সরকার আমাকে সহায়তা দিবে এবং সেই সরকারের সহায়তার মধ্যে যদি আন্তরিকতা থাকে, সদিচ্ছা থাকে, নিষ্ঠা থাকে, সততা থাকে (অসম্পূর্ণ বাক্য)। আমরা শুধুমাত্র টপ লেভেল থেকে এটাকে গাইড করবো। যদি নির্বাচন অনিরপেক্ষ হয় বা খুব বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন কারণে সরকারের উপরও কিন্তু সেই দায় পড়ে যাবে। সেজন্য সরকার এই বিষয়ে খুবই সচেতন এবার। আমরা বিশ্বাস করি আমরাও সরকারের উপর সেই চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছি যে কোন মূল্যে। আমরা তো সরকার বলতে সরকারের মন্ত্রীরা এবং সরকারের প্রশাসনিক যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন স্থানীয়ভাবে, যেমন: জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, তাদের সাথে আমাদের ধারাবাহিক মিটিং হচ্ছে। ওরাই সরকার। ওরাই প্রকৃতপক্ষে সরকার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার – তাদেরকে এখানে এনেছি। জেলা প্রশাসকদেরকে এনেছি। তাদেরকে আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি এই নির্বাচনের গুরুত্বটা কি, নির্বাচন কেন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন। তাদেরকে আমরা বারবার আন্তরিকতাভাবে এবং একদিন-দুইদিন করে এখানে রেখে প্রশিক্ষণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমরা আশা করি তারা চেষ্টা করবেন। চেষ্টার পরেও কিন্তু কিছু কিছু Lapses (ভুল) হতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে মোটাদাগে বিতর্কিত হয়ে গেলো কিনা! আপনি যদি বলে থাকেন একেবারে অ্যাবসুলেটলি (Absolutely) নিরপেক্ষ হতে হবে, একটা বিচ্যুতিও হতে পারবে না, সেটার নিশ্চয়তা দেয়া খুব কঠিন।…”

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আগামী ০৭ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে এর দায় সরকারের উপরও পড়বে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল যে মন্তব্য করেছেন, সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি। বরং তিনি সরকার বলতে মন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, প্রভৃতির কথা বলেছেন। তারাই সমষ্টিগতভাবে সরকার।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে “আংশিক মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.