সম্প্রতি একটি রকেট উৎক্ষেপণের ভিডিওকে বিমানের জানালা থেকে রেকর্ড করা চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বিমানের জানালা থেকে রেকর্ড করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু, এটা মূলত ২০২২ সালের স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট উৎক্ষেপণের সময়কার ভিডিও। তাছাড়া, ভাইরাল ভিডিওর সাথে যুক্ত ক্যাপশনের কিছু তথ্যেও অসঙ্গতি খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যগুলো হচ্ছেঃ
ইন্ডিগোর চেন্নাই থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইটের টেকঅফের কিছু পরে, উইন্ডো সিটের একজন যাত্রী তার মোবাইলে ভাইরাল ভিডিওটি রেকর্ড করেছেন।
ভিডিওটি ইসরো ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড রকেট ম্যানুফ্যাকচারিং এর অবসরপ্রাপ্ত ডিটেক্টর ডাঃ পি ভি ভেঙ্কিটকৃষ্ণান টুইট করেছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ রিভার্স ইমেজ সার্চ করে The US Sun এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা একটি রকেট উৎক্ষেপণের টিকটক ভিডিওর স্ক্রিনশটের সাথে ভাইরাল ভিডিওটির ২৪ সেকেন্ড অংশের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেই টিকটক ভিডিওটির ক্রেডিট দেওয়া হয়েছে @ChefPinkPr নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টকে।
পরবর্তীতে, প্রতিবেদনটিতে যুক্ত করা @ChefPinkPr নামের টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর আপলোড করা ভিডিওর লিঙ্কে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, কেপ ক্যানাভেরালের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানের জানালা দিয়ে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট উৎক্ষেপণের ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়েছিল।
যদিও, কোন তারিখে এই রকেট উৎক্ষেপণের ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। কারণ, Independentএর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে Nick Leimbach নামের এক ব্যক্তির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ফ্যালকন ৯ রকেট উৎক্ষেপণের ভিডিওর অনুরূপ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর টুইট করা আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের “ফ্লাইট ২২০” কেপ ক্যানাভেরালের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটির জানালা দিয়ে স্পেসএক্সের একটি রকেট উৎক্ষেপণের দৃশ্য রেকর্ড করা হয়েছিল।
তাছাড়া, বিমানের জানালা দিয়ে চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের কোনো ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল কি না এ সম্পর্কিত তথ্য নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, স্পেসএক্স (স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন) হচ্ছে একটি আমেরিকান মহাকাশযান নির্মাণকারী, উৎক্ষেপণ পরিষেবা প্রদানকারী এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ সংস্থা। এই স্পেসএক্স দ্বারা পরিকল্পিত এবং তৈরি করা পুনঃব্যবহারযোগ্য, টু- স্টেজ রকেট হচ্ছে ফ্যালকন ৯।
অন্যদিকে, ভাইরাল পোস্টগুলোতে চন্দ্রযান ৩ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দেয়া আছে। তবে, তথ্যগুলো কোন সোর্স থেকে নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাই, এই তথ্যগুলো সঠিক কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে কিছু তথ্যে অসঙ্গতি খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম।
গত ১৪ জুলাই ২০২৩ চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলো কমপক্ষে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। তাই ভাইরাল ভিডিওটির পক্ষে চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের ভিডিও হওয়া এবং চেন্নাই থেকে ঢাকাগামী ইন্ডিগোর কোনো ফ্লাইটের জানালা থেকে রেকর্ড করা সম্ভব নয়।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এর অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ডাঃ পি ভি ভেঙ্কিটকৃষ্ণান ভাইরাল ভিডিওটি টুইট করেছেন কি না এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার টুইটার অ্যাকাউন্টে অনুসন্ধান করে হয়। কিন্তু সেখানে ভাইরাল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বলা হচ্ছে, এটি মহাকাশ থেকে কোনো মহাকাশযানের প্রথম অপেশাদার ভিডিও। এখানে যদি মহাকাশ বলতে Space বোঝানো হয়, তবে দাবিটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। মহাকাশে কোনো সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান চলতে পারে না। কারণ, সাধারণ এবং প্রচলিতযাত্রীবাহী বিমানে প্রপালশন এবং লিফট উভয়ের জন্যই বাতাসের প্রয়োজন হয়। মহাকাশে কোনো বাতাস নেই। সুতরাং ভাইরাল ভিডিওটি মহাকাশ থেকে রেকর্ড করা শীর্ষক দাবিটি অবাস্তব।
যেহেতু ভিডিওটি চন্দ্রযান-৩ এর নয়, বরং ফ্যালকন ৯ নামক একটি মহাকাশযানের যেটি ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়, তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।