যা দাবি করা হচ্ছেঃ জনপ্রিয় মার্কিন সঙ্গীত শিল্পী চার্লি পুথের কনসার্ট আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ICCB – EXPO ZONE এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সিলভারলাইন ইভেন্টস নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা এই কনসার্টটি আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে যার টিকেটের দামও ঠিক হয়ে গেছে। দাবি করা হচ্ছে, চার্লি পুথ তার টিম নিয়ে অনুষ্ঠানের একদিন আগেই ঢাকায় পৌঁছাবেন।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। বাংলাদেশের কন্সার্টের আয়োজক দাবিতে সিলভারলাইন ইভেন্টস নামের যেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার নাম ব্যবহার করা হয়েছে সেটা মূলত একটি জালিয়াতি সংস্থা। বাংলাদেশের বেশ কিছু মূলধারার সংবাদমাধ্যম সিলভার লাইন ইভেন্টস এর ভুয়া ওয়েবসাইটের উপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এই ওয়েবসাইটটি চলতি মাসের ১২ তারিখে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে যার মেয়াদকাল ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেখানে কনসার্টের টিকেটের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। টিকেটের মূল্য পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে কোনো ব্যাংক না বরং শুধু মাত্র একটি নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া, এই ওয়েবসাইটে চার্লি পুথের কনসার্ট ছাড়া আর কোনো ইভেন্টের ব্যাপারে উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, চার্লি পুথের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা আছে যে, তার আসন্ন কোনো কনসার্টের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। তাছাড়া, তার দুই কন্টাক্ট এজেন্ট ফ্যাক্টওয়াচকে নিশ্চিত করেছেন যে, বাংলাদেশে এসে চার্লি পুথের গান গাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
চার্লি পুথ একজন মার্কিন গায়ক, গীতিকার এবং রেকর্ড প্রযোজক। সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে তিনি নাকি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসে গান গাইবেন। এই তথ্যের সূত্র হিসেবে সময় টিভির একটি প্রতিবেদনকে ব্যবহার করা হয়েছে। সময় টিভির সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, চার্লি পুথ আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আইসিসিবি এক্সপো জোনে একটি কনসার্টে গান গাইতে ঢাকায় আসছেন যার আয়োজক হচ্ছে সিলভারলাইন ইভেন্টস। কনসার্টটি বিকাল ৫ টায় শুরু হবে এবং ১০ টায় শেষ হবে। চার্লির পাশাপাশি বাংলাদেশি স্থানীয় শিল্পীরাও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে সিলভারলাইন ইভেন্টের কর্পোরেট সেলস এক্সিকিউটিভ তামজিদ আলম সময় টিভিকে জানান, “আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেকদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করছি আপনাদের প্রিয় শিল্পী চার্লি পুথকে আমাদের দেশের মঞ্চে আনার জন্য। এরইমধ্যে আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি। আশা করি সুন্দর একটি সন্ধ্যা আপনাদের উপহার দিতে পারব।“ এছাড়াও, বাংলাদেশের আরও কিছু মূলধারার সংবাদমাধ্যম এই একই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তাই, চার্লি পুথের কনসার্টের ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করা হয়। সেখান থেকে জানা যায় যে, চার্লির আসন্ন কোনো কনসার্টের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
পরবর্তিতে, আলোচিত কনসার্টটির আয়োজক সিলভারলাইন ইভেন্টস এর ওয়েবসাইটটি বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে উল্লেখ করা হয় চার্লি পুথের কনসার্ট আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ICCB – EXPO ZONE এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে শনি বার।
আবার, টিকেট কেনার স্থানে মূল্য পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে কোনো ব্যাংক লেনদেনের ব্যবস্থা না রেখে শুধু মাত্র একটি নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ওয়েবসাইটটির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য Who.is নামের একটি অনলাইন আইডেন্টিটি প্রোভাইডার ব্যবহার করে এর ডোমেইন যাচাই করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ওয়েবসাইটটি চলতি মাসের ১২ তারিখে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে যার মেয়াদকাল ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সিলভারলাইন ইভেন্টস এর ওয়েবসাইটে যুক্ত একটি ফেসবুক পেইজের লিংক খুঁজে পাওয়া যায়। শুরুতে এই লিংকে প্রবেশ করা গেলেও বর্তমানে পেইজটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু, Mahir Tajwar Rahman নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৮ ডিসেম্বর আপলোড করা সিলভারলাইন ইভেন্টসের পেইজ হিস্টোরির একটি স্ক্রিনশট দেখটে পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় যে, পেইজটি ২০১৫ সালের ৩০ জুন কুইন্স কলেজ ঢাকা নামে খোলা হয়েছিল পরবর্তিতে গত ৯ ডিসেম্বর এই নামটি পরিবর্তন করে সিলভারলাইন ইভেন্টস রাখা হয়।
উল্লেখ্য, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসে চার্লি পুথের গান গাওয়ার ব্যাপারে সত্যতা যাচাই এর জন্য ফ্যাক্টওয়াচ টিম তার দুজন কন্টাক্ট এজেন্ট ব্রেন্ট স্মিথ এবং ম্যাট এলাম এর সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে। তারা জানান যে, বাংলাদেশে এসে চার্লি পুথের গান গাওয়ার বিষয়টি ভুয়া। তিনি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কোনো কনসার্টে এসে গান গাইছেন না।
যেহেতু, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসে চার্লি পুথের গান গাওয়ার ব্যাপারে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।