বাচ্চাদের বাঁচাতে জীবন উৎসর্গ করেছিল মা হরিণটি – মিথ্যা দাবি

18
বাচ্চাদের বাঁচাতে জীবন উৎসর্গ করেছিল মা হরিণটি – মিথ্যা দাবি বাচ্চাদের বাঁচাতে জীবন উৎসর্গ করেছিল মা হরিণটি – মিথ্যা দাবি

Published on: [post_published]

সম্প্রতি একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ছবিতে থাকা হরিণটি তার বাচ্চাদের বাঁচাতে আত্মত্যাগ করেছিলো এবং এমন একটি ছবি তোলার পর ফটোগ্রাফার ডিপ্রেশনে চলে যান।  অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সেপ্টেম্বর, ২০১৩ এ তোলা হয়। এলিসন বাটিগিগ(Alison Buttigieg) নামের একজন ফটোগ্রাফার ছবিটি তুলেন এবং তিনি নিজে তার একটি ব্লগে নিশ্চিত করেছেন যে ছবি তোলার কারণে ডিপ্রেশনে যাননি এবং হরিণটিও বাচ্চাদের বাঁচাতে জীবন উৎসর্গ করে নি।

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ভাইরাল দাবি

ভাইরাল দাবিটি হুবুহু তুলে ধরা হলোঃ

হরিণটার চোখে কোন ভয় দেখতে পাচ্ছেন?

এ ছবিটা শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছে। ফটোগ্রাফার ছবিটা তোলার পর থেকে ডিপ্রেসনে চলে যান।

চিতা বাঘ গুলো মা হরিণ ও তার দুই বাচ্চাকে ধাওয়া করে।

মা হরিণটা খুব সহজেই চিতা বাঘগুলোর কাছে নিজেকে ধরা দেয় অথচ সে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতো কিন্তু সে তা না করে নিজেকে বলি দেয়, যাতে তার বাচ্চা দুটো পালিয়ে যেতে পারে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে চিতা বাঘগুলোর খাবারে পরিনত হওয়া মা হরিণটি তার বাচ্চাদের দূরে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া অবধি তাকিয়েই আছেন ।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

উক্ত ছবির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে “India.com” এর ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। “As photo of ‘Cheetahs preying on an impala’, goes viral, photographer Alison Buttigieg reveals truth!” শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি ভাইরাল এমনই একটি দাবির উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিলো। সেখানে মা হরিণটি স্বেচ্ছায় চিতার সামনে ধরা দিয়েছিলো যেনো তার বাচ্চারা পালিয়ে যেতে পারে — এমন দাবিটিকে অবাস্তব বলে চিহ্নিত করা হয়।

এছাড়াও প্রতিবেদন থেকে এলিসনের একটি ব্লগের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে তিনি তার এই ছবির সিরিজটি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনার কোথাও হরিণের এমন আত্মত্যাগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তিনি লিখেছেন, চিতাবাঘগুলোর মা তার সন্তানদের শেখাচ্ছিল কিভাবে একটি শিকারকে মেরে ফেলতে হয়। একটি হরিণকে আটকে বাচ্চাদের এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল সে। কিন্তু চিতাবাঘের বাচ্চারা শিকারকে মেরে ফেলার ব্যাপারে মনোযোগী ছিল না। সবচেয়ে অবাক করার মত ঘটনাটি ছিলো উক্ত হরিণটির অভিব্যক্তি। হরিণটি শান্তভাবে সেখানে দাঁড়িয়েছিলো। এর ব্যাখ্যা হিসেবে এলিসন ধারণা করছেন যে, ভয় এবং প্রবল আকস্মিকতায় এমনটা হয়ে থাকতে পারে। পুরো ঘটনাটি ছিলো কয়েক মিনিটের এবং শেষমেশ মা চিতাবাঘটি এই হরিণটিকে মেরে ফেলে।

সবগুলো ছবি এবং ঘটনার বর্ণনা পড়ুন এখানে

পরবর্তীতে এলিসনের ডিপ্রেশনে পরার দাবিটি যাচাই করতে এলিসন বাটগিগের ফেসবুক আইডিতে অনুসন্ধান করা হয়। ছবিটি নিয়ে তার একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে তার ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের পেজে বেশি লাইক পাওয়ার জন্য মানুষ এমন গল্প তৈরি করছে। তার সম্পূর্ণ স্ট্যাটাসটি পড়ুন এখানে

My Stranglehold photo went viral with a completely ridiculous fake story accompanying it, and implications I fell into…

Posted by Alison Buttigieg on Monday, February 13, 2017

 

সুতরাং বিষয়টি পরিষ্কার যে বর্তমানে ভাইরাল দাবিটি মনগড়া। মূল ঘটনার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.