সম্প্রতি ফেসবুক এবং থ্রেডস নামক দুটো সামাজিক মাধ্যমে একটি সাপের ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি বিষধর রাসেল’স ভাইপার। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, সেটি নির্বিষ জলঢোঁড়া (Chequered Keelback or Asiatic Water Snake) সাপ। রাসেল’স ভাইপার এবং জলঢোঁড়া সাপের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
অনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিতে যে সাপটিকে রাসেল’স ভাইপার দাবি করা হচ্ছে সেটি নির্বিষ জলঢোঁড়া সাপ। এই সাপের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: এদের হলুদ, সবুজ কিংবা বাদামী বর্ণের শরীরে অসংখ্য ছককাটা প্যাটার্ন আঁকা থাকে, কিছু কিছু জলঢোঁড়ার শরীরে কালো বর্ণের চারকোণা দাগ থাকে, এদের মাথা রাসেল’স ভাইপারের তুলনায় চোখা হয় এবং মাথা ঘাড়ের চেয়ে কিছুটা চওড়া হয়, এরা গড়ে তিন-চার ফুট লম্বা হয় দৈর্ঘ্যে, এরা নির্বিষ হলেও হুমকির সম্মুখীন হলে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। সাধারণত জলাশয়ের আশেপাশে এদের বিচরণ করতে দেখা যায় বলে এর নাম জলঢোঁড়া। তাছাড়া, জলঢোঁড়া সাপের লেজ তাদের শরীরের তুলনায় খুব সরু এবং দীর্ঘ হয়, যেখানে রাসেল’স ভাইপারের লেজ তার দেহ থেকে কিছুটা ছোট হয়।
অন্যদিকে, রাসেল’স ভাইপারের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: এদের মাথা ত্রিকোণাকৃতি বা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘V’ এর মতো দেখতে, এদের মাথা ঘাড় থেকেও চওড়া হয়, এদের নাসারন্ধ্র ছোট এবং চোখের মণি খাঁড়া হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে চেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফ্যাকাশে কমলা বাদামী রঙের পিঠের উপর লালচে বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত, যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীরে এই চাকতির মতো কালো রঙের সীমানাযুক্ত বৃ্ত্তগুলো কিছুটা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় বাংলায় এই সাপকে বলা হয় চন্দ্রবোড়া। রাসেল’স ভাইপার সাপ তার এই অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ত্বকের গঠনের কারণে এবং এর চামড়া দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি হয় বলে এদের শিকার করা হয়। বিপদের সম্মুখীন হলে রাসেল’স ভাইপার কুন্ডলী পাকিয়ে ‘ফোঁস ফোঁস’ শব্দ করে শত্রুকে লক্ষ্য করে সতর্কবার্তা পাঠাতে থাকে এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাসের ফলে এর শরীর স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বেশি ফেঁপে উঠে।
অতএব, উপরে দুটো সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিগুলোতে দৃশ্যমান সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয়। বরং, নির্বিষ জলঢোঁড়া সাপ।
এর আগেও কয়েকটি মৃদু বিষধর এবং নির্বিষ সাপকে রাসেল’স ভাইপার সাপ বলে প্রচার করেছিল বেশকিছু সংবাদমাধ্যম। সেগুলো নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
শুধু সামাজিক মাধ্যম নয়, বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরের একটি প্রতিবেদনেও নির্বিষ জলঢোঁড়া সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টটিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।