“নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি” প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন একথা? 

61
“নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি” প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন একথা? 
“নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি” প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন একথা? 

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছেঃ অবশেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বীকার করেছেন যে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় নি।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে: দাবিটি বিভ্রান্তিকর। “নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি” প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সম্পুর্ন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা একবারও বলেননি। মূলত গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট শেষে ঢাকার নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিং করার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবের একপর্যায়ে তিনি বলেছিলেন “আমি তো গ্রহণযোগ্য হয়েছে এই কথা এখনও বলিনি। গ্রহণযোগ্য হয়েছে এটা আপনারা বলবেন ফলাফল প্রকাশ এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন হওয়ার পরে। এর জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।” কিন্তু ভাইরাল পোষ্টগুলোতে এই বক্তব্যের পরের অংশটুকু বাদ দিয়ে শুধু প্রথম বাক্যটি উদ্ধৃত করার ফলে এর ভাবার্থের পরিবর্তন হয়ে গেছে। অর্থাৎ,  প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সত্যিই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি শীর্ষক কোনো বক্তব্যের কি না — এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। অনুসন্ধানে এনটিভি, সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে নির্বাচন কমিশনারের প্রেস ব্রিফিংটির মূল ভিডিও খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। ভিডিওর কোথাও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেননি যে, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। ভিডিওর শুরু থেকে ২ মিনিট ১৬ সেকেন্ড পর্যন্ত সহংশতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ এবং সাংবাদিকদের  দায়িত্ব পালনে সফলতার ব্যাপারে বলছিলেন। ২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের পরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “ভোটের ফলাফল আসুক। জনগণ কী বলে, গণমাধ্যমে কী উঠে আসে, তার উপর ভিত্তি করে বলতে পারব আন্তর্জাতিক ভাবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি না।” এরপরে ২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের সময় নির্বাচন কমিশনারের কাছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন  “দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সরকারের সহযোগিতায় এবং  সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে।” তার এই উক্তিকে কেন্দ্র করে ৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের সময় সাংবাদিকরা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে  ”নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য হয়েছে সেটা কোন মানদণ্ডে বলেছেন?”  তখন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ” আমি তো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে এই কথা এখনও বলিনি।” পরবর্তীতে ৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেছিলেন “আমি তো গ্রহণযোগ্য হয়েছে এই কথা এখনও বলিনি। গ্রহণযোগ্য হয়েছে এটা আপনারা বলবেন ফলাফল প্রকাশ এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন হওয়ার পরে। এর জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।”

অন্যদিকে ভাইরাল ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, মূল ভিডিওর ৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের সময় সাংবাদিকরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে যেই প্রশ্নটি করেছিলেন ভাইরাল ভিডিওটি সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। অর্থাৎ ভাইরাল হওয়া পোষ্টগুলোতে মূল ভিডিওর ৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে শেষ পর্যন্ত অংশটুকু ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের এর ভাবার্থের পরিবির্তন হতে দেখা যাচ্ছে।

পরবর্তিতে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অন্য কোনো সময়ে ‘৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি’ এ জাতীয় কোনো বক্তব্য দিয়েছিলেন কি না এ সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ভাবে ভিন্ন ভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হলেও নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ৮ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে মন্তব্য করেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে প্রমাণিত হয় না যে, তিনি “নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি” এমন মন্তব্য করেছেন বা এটি বুঝিয়েছেন।  তাই, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.