সম্প্রতি ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি শেয়ার হচ্ছে যার ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, শিশু ধর্ষণের অপরাধে সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিধানে সই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত ছবিটি পুরনো। ৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংসদ সদস্য বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষর করার ছবি এটি। ২০২০ সালে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবির প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির আইনটি সংশোধন করা হয়। তবে শুধু শিশু ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আলাদা কোনো আইন পাস হয়নি।
সম্প্রতি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে শেয়ার হওয়া উক্ত পোস্টটি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ভাইরাল ছবিটির ক্যাপশনে বলা হচ্ছে “শিশু ধর্ষণের অপরাধে সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিধানে সই করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা”
উক্ত ক্যাপশনটি ধরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, প্রায় একই ক্যাপশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিন্ন ভিন্ন ছবির সাথে ২০১৯ এবং ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত ছবিটি গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এটি ৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংসদ সদস্য বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষর করার ছবি। প্রথম আলো এবং বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর থেকে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের ছবি ভিত্তিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ছবিটি তুলেছেন ফটো সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম কল্লোল।
“ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড” শীর্ষক সংবাদ অনুসন্ধানে এ বিষয়ে একাধিক সংবাদ খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। একাধিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ১২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেদিন মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য খসড়াটির নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যা তার পরদিন ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে, সে সময় নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সেই দাবি আবারও জোরালো হয়ে ওঠে। সে সময় জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় আন্দোলন চলাকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ অধ্যাদেশটি জারি করেন।
পরবর্তীতে সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হবার প্রথম দিন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০০০’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে বিলটি জাতীয় সংসদে কন্ঠভোটে পাস হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চম ভাগের ২য় পরিচ্ছেদ (আইন প্রনয়ন ও অর্থসংক্রান্ত পদ্ধতি) অনুযায়ী আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে আনীত প্রত্যেকটি প্রস্তাব বিল আকারে উত্থাপিত হয় যা রাষ্ট্রপতির সম্মতিদান ব্যতীত আইনে পরিণত হয় না। সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদঅনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতে রাষ্ট্রপতি সরাসরি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। তাই কোনো আইন প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর একক কোনো ক্ষমতা নেই।
পরিশেষে আরও উল্লেখ্য যে, শিশু ধর্ষণে শাস্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আলাদা কোনো আইন হয়নি পাস হয়নি। সংশোধিত আইনে নারী ও শিশু উভয়ের ক্ষেত্রে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। পূর্বের আইনে নারী ও শিশু ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?