ইসকনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি ছিল গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর)। এ শুনানির আগের রাতে (২ ডিসেম্বর) একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে লড়াই করায় হামলার শিকার হয়েছেন আইনজীবী রমেন রায়। তাঁর বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে এসব প্রতিবেদনে। তবে ফ্যাক্ট ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়-
১। অ্যাডভোকেট রমেন রায়ের আহত হওয়ার ঘটনাটি গত ২৫ নভেম্বরের
২। তাঁর বাড়িঘরে হামলার দাবিটিও সত্য নয়।
৩। তিনি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী নন।
তাই ফ্যাক্টওয়াচ দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
টুইটটিতেও দাবি করা হয়েছে, আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে মামলা লড়ার কারণে ইসলামপন্থীরা রমেন রায়ের বাড়ি ভাংচুর করে এবং তাকে নৃশংসভাবে আক্রমণ করে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ। তিনি ফ্যাক্টওয়াচকে বলেন, “ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রমেন রায়ের ওপর হামলার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। এই নামে চট্টগ্রামে কোনো আইনজীবী নেই।’’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির তালিকা খুঁজেও এমন কোনো আইনজীবীর নাম পাওয়া যায়নি।
ফ্যাক্টওয়াচের হাতে থাকা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ওকালত নামা থেকে দেখা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে তাঁর মামলাটি লড়ছেন শুভাশিস শর্মা।
আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরোর প্রতিবেদক সবুর শুভও ফ্যাক্টওয়াচকে নিশ্চিত করেছেন এই নামে চট্টগ্রামে কোনো আইনজীবীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি।
দাবিটি সম্পর্কে জানতে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ। তিনি বলেন, “রমেন রায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী ছিলেন না। চিন্ময় কৃষ্ণ যেদিন গ্রেপ্তার হয়েছিল (২৫ নভেম্বর) ,সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচীতে রমেন রায়কে দূর্বৃত্তরা কুপিয়ে আহত করেছিল।”
রমেন রায়ের সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটিও তাঁকে দেখানো হয়।
ছবিটি দেখে স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস নিশ্চিত করেন, এটি রমেন রায়েরই ছবি।
এ ছাড়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদনের শুনানিতে চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী না থাকা নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিটিতেও জামিন শুনানি ঘিরে রমেন রায় নামে কোনো আইনজীবীর ওপর হামলার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে গত ২৫ নভেম্বর রমেন রায় নামে এক ব্যক্তি আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
রমেন রায়ের আহত হওয়ার ব্যাপারে নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট গত ২৫ নভেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শাহবাগে চলা অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রমেন রায় (৫০) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আহত রমেন রায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। পরে হঠাৎ বেশ কয়েকজন লোক লাঠি হাতে নিয়ে এসে আমাদের ওপরে হামলা চালায়। এ সময় আমি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হই। পরে কয়েকজন আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছে।
পরে এই নামে খুঁজে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে রামেন্দ্রনাথ রায় নামে এক আইনজীবীর নাম পাওয়া যায়।
এসব তথ্যের সূত্রে রমেন রায়ের এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ।
তিনি ফ্যাক্টওয়াচকে জানান, রমেন রায় পেশায় একজন আইনজীবী ও অ্যাডভোকেট। তিনি গত ২৫ নভেম্বর ঢাকায় হামলার শিকার হন এবং আহত হন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
ওই নিকটাত্মীয় আরও জানান, রমেন রায়ের বাড়ীঘরে হামলার দাবিটিও সঠিক নয়।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ দাবিগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh