খাগড়াছড়ি শহরের নোয়াপাড়া এলাকায় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ মোহাম্মদ মামুন নামের এক বাঙালি ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করা হয় যার ফলে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জের ধরে বিকেল পাঁচটার দিকে দীঘিনালায় পাহাড়িদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সেখানকার বাঙালিরা। মিছিলে বাধা দেয়া হলে পাহাড়ি এবং বাঙালিদের মধ্যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একপর্যায়ে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় গোলাগুলি শুরু হয় এবং একাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়া হয়। গোলাগুলিতে তিনজন নিহত এবং আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। এই উত্তেজনা রাঙামাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে অস্ত্রসহ কয়েকজন যুবকের দুইটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে ভিডিওগুলো এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে এগুলো ফিলিপাইনের ভিডিও, পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় পোস্টগুলো বিভ্রান্তিকর।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দুইটির অনুরূপ ভিডিও (ভিডিও-১, ভিডিও-২) সাত্তার জাক্কাল নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে খুঁজে পাওয়া যায়, যেই পেজটির পরিচিতিতে ঠিকানা হিসেবে ফিলিপাইন উল্লেখ করা হয়। এই পেজ থেকে ভিডিও দুইটি ১৪ সেপ্টেম্বর আপলোড করা হয়েছিল। অর্থাৎ, এই ভাইরাল ভিডিও দুইটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ফেসবুকে বিরাজমান।
ভাইরাল ভিডিও দুইটি খেয়াল করে দেখলে দুই জায়গায়ই “ট্যাপ ফ্রেশ ব্রেড বেকারি” নামের একটি ব্যানার দেখতে পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভিডিও দুইটি একই স্থান থেকে ধারণ করা হয়েছে। আবার এর মধ্যে একটি ভিডিওতে সাদা রঙের একটি গাড়ি যেতে দেখা যায় যার নাম্বার প্লেটে ‘NDV 7797’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। এই ধরণের নাম্বারপ্লেট বাংলাদেশে নয় বরং ফিলিপাইনে পরিচিত। বাংলাদেশে গাড়ির নাম্বারপ্লেটে ‘ঢাকা মেট্র-খ ০০- ০০০০’, ‘চট্ট মেট্র-গ ০০-০০০’ এই ধরণের লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
এরপরে, সাত্তার জাক্কাল নামের এই ফেসবুক পেজ থেকে দ্বিতীয় ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডের দৃশ্যের কাছাকাছি ফ্রেমের আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। যদিও ভাইরাল ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড কিছুটা ঝাপসা কিন্তু আলোচিত ফেসবুক পেজ থেকে পাওয়া অন্য ভিডিওতে পরিষ্কার একটি গ্যাস ষ্টেশন দেখা যায়। সেখানে গ্যাস স্টেশনের নাম ‘ এবি মিনি গ্যাস ষ্টেশন’ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে ফিলিপাইনের মোবাইল পেমেন্ট পরিষেবা জিক্যাশের একটি ব্যানারও দেখা যায়।
সুতরাং, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে এতটুকু নিশ্চিত যে এগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারণ করা কোনো ভিডিও নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh