৫ জুন ২০২১ তারিখে “যেভাবে ১ টাকা দিয়ে পাবেন ব্যাগ ভর্তি টাকা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে probashiupdate24.com নামের একটি ওয়েব পোর্টাল। সংবাদটির বিস্তারিত অংশ বলছে, “কোটিপতি হতে পারবেন আপনি যদি আপনার কাছে থাকে ১ টাকার কয়েন। ১৯৮৫ সালের আগের কয়েন যদি থাকে আপনার কাছে তবে সেটা বিক্রি করে হতে পারবেন কোটিপতি। OLX এ গিয়ে নিজের নাম রেজিস্টার করে কয়েনটিকে বিক্রি করতে পারবেন এবং পেয়ে যাবেন ৯.৯৯ কোটি টাকা।“ এটি একটি ভুয়া সংবাদ। বাস্তবে OLX এর ওয়েবসাইটে ১৯৮৫ সালের আগের ১ টাকার কয়েন ৯.৯৯ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে এমন কোনো বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়নি।
“যেভাবে ১ টাকা দিয়ে পাবেন ব্যাগ ভর্তি টাকা” শিরোনামে সম্প্রতি বেশ কিছু সংবাদ শেয়ার হয়েছে ফেইসবুকের বিভিন্ন পেইজ এবং গ্রুপে। এমন কিছু পোস্ট দেখুনএখানে,এখানে,এখানে,এখানে এবংএখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ টিম এই সংবাদটির বিস্তারিত অংশের লেখা এবং শব্দের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে পেয়েছে, “আপনিও পেতে পারেন ৯ কোটি টাকা থাকে যদি পুরনো ১ টাকার কয়েন” শিরোনামে হুবহু একই বিবরণ যুক্ত সংবাদটি এই বছরেরজানুয়ারি,ফেব্রুয়ারি,মার্চ,এপ্রিল,মে এবংজুন মাসে প্রকাশিত হয়েছিল।
OLX এর ওয়েবসাইটে কি আদৌ ৯.৯৯ কোটি টাকায় ১ টাকার কয়েন বিক্রি হচ্ছে?
OLX একটি অনলাইন নির্ভর পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্ল্যাটফর্ম। OLX লিখে গুগলে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে ভারত, ব্রাজিল, পর্তুগাল, ইন্দোনেশিয়া, রোমানিয়া এবং সাউথ আফ্রিকাসহ প্রায় ৩০টির বেশী দেশে OLX গ্রুপের ব্যবসায়িক কার্যক্রম রয়েছে। OLX এর ভারতীয় ওয়েবসাইটটিতে Bangladeshi 1 taka লিখে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে একটি ১ টাকার (রূপালী) কয়েন এরবিজ্ঞাপন যার মূল্য উল্লেখিত রয়েছে ৫,০০০ রূপি। যদিও বাংলাদেশের নাগরিকরা এই সাইটে কোনো বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন না, কারণ এখানে কোনো বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে বিক্রয়কারীর থাকতে হবে একটি একাউন্ট যেটি খুলতে প্রয়োজন পড়বে একটি ভারতীয় সিম নম্বর। ফ্যাক্টওয়াচ টিমের একজন সদস্য সাইটটিতে একটি কয়েনের বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেছেন।
গুগলে Bangladeshi old coin লিখে অনুসন্ধান করে আরও পাওয়া গেছে ওমানের OLX ওয়েবসাইটে কয়েকটি বিজ্ঞাপন যেখানে সর্বনিম্ন ২,৫০০ ওমানি রিয়াল থেকে শুরু করে ৩০,০০০ ওমানি রিয়াল পর্যন্ত দাম হাকা হয়েছে বাংলাদেশী বিভিন্ন কয়েনের। সেগুলোর মধ্যে বেশীরভাগই ছিল সোনালী রঙের বাংলাদেশী ১ টাকার কয়েন। তবে উক্ত দামে কেউ কেউ কয়েন বিক্রি করতে পেরেছেন কিনা এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশী ১ টাকা কয়েনের বয়স কত?
উইকিপিডিয়ায় বাংলাদেশী টাকার ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম ৫, ১০, ২৫ এবং ৫০ পয়সা মূল্যের ধাতব মুদ্রার প্রচলন করা হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে ১ পয়সা এবং ১৯৭৫ সালে ১ টাকা মূল্যের ধাতব মুদ্রা প্রবর্তন করা হয়। উক্ত ভুয়া সংবাদগুলোতে গুলোতে বার বার বলা হচ্ছে ১৯৮৫ সালের আগের ১ টাকার কয়েন বিক্রি করলে পাওয়া যাবে ৯.৯৯ কোটি টাকা। অথচ বেশীরভাগ সংবাদগুলোতে ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে ১ টাকার সোনালী কয়েন। উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম এই ১ টাকার সোনালী রঙের মুদ্রা বা কয়েন প্রচলন শুরু হয় যেটিতে ধাতব উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ইস্পাত। মুদ্রার বিপরীত পাশে রয়েছে জাতীয় প্রতীক শাপলা এবং অভিমুখে রয়েছে চারজন মানুষের ছবি এবং “পরিকল্পিত পরিবার-সব জন্য খাদ্য” লেখাযুক্ত স্লোগান। সংবাদে ব্যবহৃত মুদ্রাটিতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ১৯৯৬ সাল। অর্থাৎ এই ১ টাকার মুদ্রাটি ১৯৮৫ সালের আগের নয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমেও একই ধরণের সংবাদ!
গত ২ এপ্রিল ২০২১ তারিখে kolkata24x7.com নামের একটি ওয়েব পোর্টাল “১ টাকার এই কয়েন থাকলেই আপনি হবেন কোটিপতি! জেনে নিন কিভাবে” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে যেখানে তারা বলেছে, “এই মুদ্রাটি ব্রিটিশ শাসনের সময়ের হওয়া উচিত অর্থাৎ মুদ্রাটি 1885 সালে নির্মিত হতে হবে। আপনার যদি এমন ১ টাকার মুদ্রা থাকে, যা কিনা 1885-এ মুদ্রিত হয়েছে, তবে আপনি সেই মুদ্রা অনলাইন নিলামের মাধ্যমে প্রচুর উপার্জন করতে পারবেন। অনলাইন বিক্রি করে আপনি 9 কোটি 99 লক্ষ টাকা পর্যন্ত জিততে পারবেন।“
এই মুদ্রার বিক্রি বা নিলামের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ওএলএক্স এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদটিতে।বাংলাদেশের সংবাদগুলোর সাথে এই সংবাদের একটি মজার পার্থক্য হচ্ছে মুদ্রার সাল এবং দেশ নিয়ে। বাংলদেশের সংবাদে বলা হচ্ছে, কয়েনটি হতে হবে ১ টাকার এবং ১৯৮৫ সালের আগের। অন্যদিকে ভারতীয় এই সংবাদটিতে বলা হচ্ছে কয়েনটি হতে হবে ১ রুপি এবং ১৮৮৫ সালের যা বৃটিশ শাসনের সময়ে প্রচলিত ছিল। যদিও উক্ত দুই দেশের সংবাদেই কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
এক টাকার সোনালী কয়েন গুজব
যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে হঠাৎ করেই এক টাকার লাল কয়েন নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজবে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকা। অজানা ও অদ্ভুত কারণে এই ধাতব মুদ্রাটি বিক্রি হতে শুরু করে ৫০-২০০ টাকায়। সারা দেশে বহু সংঘবদ্ধ চক্র এক টাকার সোনালি কয়েন কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। সে সময় যে যেভাবে সম্ভব এক টাকার লাল কয়েন সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে ১ টাকা মূল্যমানের সাধারণ এ মুদ্রাটি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ইউটিউবে ‘১ টাকার লাল কয়েন’ লিখে অনুসন্ধান করলে প্রচুর পরিমাণে ভিডিও পাওয়া যায়। কোনো কোনো ভিডিওতে দাবি করা হয়, এই ১ টাকার লাল কয়েনে মেশানো রয়েছে স্বর্ণ। আবার কোনো কোনো ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, ১ টাকার লাল কয়েন পানিতে ভাসলেই পাবেন ৫ কোটি টাকা। এবছরে ফেব্রুয়ারি মাসেও “১টাকার লাল কয়েন পানিতে ভাসলেই পাবেন কোটি টাকা! আসল রহস্য” শিরোনামে বিভ্রান্তিকর একটি খবর বেশ ভাইরাল হয়েছিল ফেইসবুকে। যদিও সেই খবরে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি কিভাবে পাওয়া যাবে ১ টাকার লাল কয়েনের বিনিময়ে কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে এটা নিশ্চিত যে, কয়েনের গুজবটি বিভিন্ন সময়ে সামাজিকমাধ্যমে ঘুরে ঘুরে আসে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। তাছাড়া, বাংলাদেশী হিসেবে OLX সাইটে ক্রয়-বিক্রয় করার কোনো সুযোগও নেই। তাই এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ টিম মিথ্যা রেটিং করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?