সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি নোটের ছবি সংবলিত পোস্ট শেয়ার হতে দেখা গেছে যা থেকে মনে হতে পারে যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময়যোগ্য বা যা দিয়ে লেনদেন করা সম্ভব হবে – এমন একটি পঞ্চাশ টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, উক্ত নোটের ছবিটি পঞ্চাশ টাকার বিনিময়যোগ্য নোট নয়, বরং সেটা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি স্মারক নোট (Commemorative Note), যা ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ইস্যু করা হয়েছিলো। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগেও ২৫ টাকা, ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ৬০ টাকা, ৭০ টাকা, এবং ১০০ টাকার স্মারক নোট ইস্যু করেছিলো। সংগ্রহের স্বার্থে যে কেউ টাকার বিনিময়ে এসব স্মারক নোট কিনতে পারবেন। কিন্তু এসব নোট দিয়ে বাজারে লেনদেন করা সম্ভব নয়। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত একটি নোটের ছবি সংবলিত পোস্টের দাবিটির যথাযথতা যাচাই করতে আমরা উক্ত নোটটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, নোটটির যে পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মেট্রোরেলের ছবি আছে অর্থাৎ, নোটের সম্মুখভাগের (Obverse) কেন্দ্রে ‘পঞ্চাশ টাকা’ এবং তার নিচে যথাক্রমে ‘স্মারক নোট’ এবং ‘বিনিময়যোগ্য নয়’ কথাগুলো লেখা আছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর ওয়েবসাইটে গিয়ে স্মারক নোট সম্পর্কিত তথ্যের জন্য অনুসন্ধান করা হয় এবং সেখানে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত নোটের ছবিটির অনুরূপ একটি নোট খুঁজে পাওয়া গেছে। উক্ত ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে যে, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক পঞ্চাশ টাকার একটি স্মারক নোট ইস্যু করেছিলো এবং নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে আগ্রহী ক্রেতারা উক্ত স্মারক নোটটি সংগ্রহ করতে পারবেন। তাছাড়া, গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ এ দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘মেট্রোরেল চালু উপলক্ষে আসছে ৫০ টাকার স্মারক নোট’ শীর্ষক শিরোনাম সংবলিত একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয় যেখানে বলা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৫০ টাকার স্মারক নোটটি আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করবেন।”
Image: Obverse side of the Fifty Taka’s commemorative note
Image: Obverse and reverse side of the commemorative note issued by Bangladesh Bank
অন্যদিকে, বাজারে প্রচলিত পঞ্চাশ টাকার নোটের সম্মুখভাগে লেখা থাকে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে পঞ্চাশ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে’ অর্থাৎ, উক্ত নোটটি বিনিময়যোগ্য বা যা দিয়ে লেনদেন করা সম্ভব।
বছরখানেক আগে সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ইস্যুকৃত পঞ্চাশ টাকার একটি স্মারক মুদ্রাকে পঞ্চাশ টাকার নতুন কয়েন বা মুদ্রা বলে প্রচার করা হয় যা সেই সময় ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর বলে রায় দিয়েছিলো। ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগেও বিভিন্ন উপলক্ষ যেমন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণ জয়ন্তী, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর ইত্যাদি উপলক্ষে ২৫ টাকা, ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ৬০ টাকা, ৭০ টাকা, এবং ১০০ টাকার স্মারক নোট ইস্যু করেছিলো।
অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে, সামাজিক মাধ্যমে যে পঞ্চাশ টাকার নোটের ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে সেটা আসলে একটি স্মারক নোট যা বিনিময়যোগ্য নয়।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।