নির্বিষ দুধরাজ সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে প্রচার

20
নির্বিষ দুধরাজ সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে প্রচার নির্বিষ দুধরাজ সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে প্রচার

Published on: [post_published]

নির্বিষ সাপকে বিষধর সাপের সাথে ঘুলিয়ে ফেললে বা বিষধর সাপকে নির্বিষ সাপ ভেবে ভুল করলে মানুষ এবং সাপ, দুটোরই জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিষধর রাসেল’স ভাইপার সাপ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে এবং অনেকেই অন্যান্য বিষধর কিংবা নির্বিষ সাপের সাথে রাসেল’স ভাইপারকে মিলিয়ে ফেলছে। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে সাপ মেরে তার ছবি তুলে বা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন এবং জানতে চাচ্ছেন সাপটি রাসেল’স ভাইপার কিনা! এভাবে সাপের পরিচয় না জেনে নির্বিচারে নির্বিষ এবং বিষধর সাপ মারার ফলে সেগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর মাঝে “ডেইলি বাংলাদেশ” এবং “দৈনিক বাংলা” নামক দুটো সংবাদমাধ্যম নরসিংদীতে রাসেল’স ভাইপার সাপ পাওয়া গেছে — এই খবর পরিবেশন করতে গিয়ে সম্পূর্ণ নির্বিষ দুধরাজ (Copper-headed Trinket) সাপের ছবি ব্যবহার করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন লোক মৃত দুধরাজ সাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। একটি নির্বিষ সাপকে বিষধর রাসেল’স ভাইপার হিসেবে উপস্থাপন করে সংবাদ প্রকাশ করায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ঐ সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

 

অনুসন্ধান:

সম্প্রতি নরসিংদীর চিনিশপুরে একটি রাসেল’স ভাইপার সাপ মারা হয়েছে এবং এই ঘটনার পর এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন – এই মর্মে দৈনিক বাংলা এবং ডেইলি বাংলাদেশ দুটো সংবাদ প্রকাশ করেছে, যেখানে ফিচার ছবি হিসেবে ব্যবহৃত ছবিতে একটি মৃত নির্বিষ দুধরাজ সাপ নিয়ে একজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মোটামুটি সব জায়গায় দুধরাজ (Copper-headed Trinket) সাপের বিচরণ রয়েছে। এই সাপের মাথা কিছুটা তামাটে বর্ণের হয় এবং এর শরীরের উপরিভাগে লম্বা, কিন্তু অনিয়মিত কালো রঙের ডোরাকাটা দাগ আঁকা থাকে। এই সাপ দৈর্ঘ্যে পাঁচ ফুট থেকে সর্বোচ্চ সাত কিংবা সাড়ে সাত ফুট লম্বা হয়। এরা ইঁদুর, ব্যাঙ, ছোট পাখি শিকার করে খায় বলে যেকোন জায়গায় মানিয়ে নিতে পারে। দুধরাজ সাপ নির্বিষ হলেও এরা তাদের আক্রমণাত্মক ভঙ্গির জন্য বেশ পরিচিত। হুমকির সম্মুখীন হলে এই সাপ তাদের দেহকে চ্যাপ্টা করে ফেলতে পারে এবং পুরো শরীরকে ইংরেজি বর্ণমালা ‘S’ আকৃতির মতো করে ‘হিস হিস’ শব্দ করে এবং মুখ ‘হা’ করে মাথা পেছন দিকে নিয়ে আক্রমণের ভঙ্গিতে শত্রুকে সতর্কবার্তা পাঠায়। দুধরাজ সাপের নামের কারণে অনেকে বিশ্বাস করেন যে এই সাপ গরু বা ছাগলের উলান থেকে দুধ খেয়ে যায়। ফলে, মানুষজন এদের দেখলেই মেরে ফেলে। তবে, এই বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান জাগো নিউজকে জানান, “পৃথিবীর কোন সাপই দুধ চুষে খেতে পারে না। গরুর উলুনে এক ধরনের পোকায় কামড় দেয় যার ফলে কামড়ের দাগ পড়ে কিন্তু সাধারণ কৃষক এই দাগ দেখেই ভ্রান্ত ধারণা থেকে প্রচার করে সাপে গাভীর দুধ খায়।”

Credit: Indian Snakes

Credit: Nova Nature Welfare Society

অন্যদিকে, রাসেল’স ভাইপার হচ্ছে ভাইপারিড (Viperidae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি তীব্র বিষধর সাপ। রাসেল’স ভাইপারের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: এদের মাথা ত্রিকোণাকৃতি বা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘V’ এর মতো দেখতে, এদের মাথা ঘাড় থেকেও চওড়া হয়, এদের নাসারন্ধ্র ছোট এবং চোখের মণি খাঁড়া হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে চেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফ্যাকাশে কমলা বাদামী রঙের পিঠের উপর লালচে বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত, যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীরে এই চাকতির মতো কালো রঙের সীমানাযুক্ত বৃ্ত্তগুলো কিছুটা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় বাংলায় এই সাপকে বলা হয় চন্দ্রবোড়া। দৈনিক বাংলা এবং ডেইলি বাংলাদেশ তাদের সংবাদে রাসেল’স ভাইপার বলে যে সাপটির ছবি ব্যবহার করেছে সেটি লম্বায় অনেক বড়। সাধারণত রাসেল’স ভাইপার এত লম্বা হয় না। একটি পূর্ণবয়স্ক রাসেল’স ভাইপার দৈর্ঘ্যে পাঁচ ফুটের চেয়ে খানিকটা লম্বা হতে পারে। 

Credit: iNaturalist

Credit: Britannica Kids

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে, আলোচিত সংবাদমাধ্যমগুলো যে সাপকে রাসেল’স ভাইপার হিসেবে উপস্থাপন করেছে সেটি আসলে নির্বিষ দুধরাজ সাপ। এর আগে রাসেল’স ভাইপার সাপ বলে মৃদু বিষধর এবং কম ক্ষতিকর কুকুরমুখো জলবোড়া সাপের ছবি ব্যবহার করেছিল কিছু সংবাদমাধ্যম। ফ্যাক্টওয়াচ সেগুলো যাচাই করে দেখেছিল এবং বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করেছিল। 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ আলোচিত সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.