“মায়ের গায়ে হাত তোলায় স্ত্রী কে সাথে সাথেই তালাক দিয়ে ধার [ঘাড়] ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল মোসাদ্দেক” শিরোনামে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে । ফ্যাক্ট ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটা ২০১৮ সালের পুরনো একটি খবর। স্ত্রীকে “তালাক ও ঘাড় ধাক্কা” দিয়ে বের করে দেয়ার বিষয়টি মোসাদ্দেক এর ব্যাটাগিরিকে তার ভক্তকূলের কাছে সিগনিফাই করতে পারে – এই আশা থেকে সম্ভবত ৩ বছর আগের সংবাদটিকে নতুন করে ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ক্রিকেটার মোসাদ্দেক তার স্ত্রীকে “ঘাড় ধাক্কা” দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন কিনা এমন জানা যায় নি। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বসবাস করছেন, এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি তাদের মাঝে। এমতাবস্থায়, প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে ডিভোর্সের এই খবরটি জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে ফ্যাক্টওয়াচ মনে করে।
বিভ্রান্তির উৎস
ভাইরাল হওয়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে।মূলত কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের খবর শেয়ার এর মাধ্যমে ফেসবুকে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ছে।
কি বলা হচ্ছে খবরে ?
ডেইলি রক্সি নামক অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মূল খবরটি এমন – এখন থেকে ঠিক ৬ বছর আগের কথা। খালাতো বোন সামিয়া শারমিনের সঙ্গে বিয়ে হয় জাতীয় দলের বর্তমান তারকা ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। বিয়ের পর থেকেই সৈকতকে তার পরিবার ছেড়ে আলাদা সংসার করতে চাপ দিতে থাকে শারমিন।
একদিকে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা অন্যদিকে স্ত্রীর আলাদা হওয়ার চাপ। একপর্যায়ে স্ত্রীকে তালাক বা ডিভোর্স দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন জাতীয় দলের এ অলরাউন্ডার।নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন তার স্ত্রী শারমিন।
এ বিষয়টি চাউর হওয়ার পর বিকেল থেকেই মোসাদ্দেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। রাতে যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপে মোসাদ্দেক বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই ও আমাকে আলাদা সংসার গড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু আমার বাবা নেই, যে মায়ের কারণে আমি আজ ক্রিকেটার। সেই মাকে ছেড়ে কিভাবে আলাদা থাকি? এটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি ওকে এটা নিয়ে অনেক বুঝিয়েছি।’
সৈকত আরও বলেন, ‘আমি যখন খেলার কারণে ট্যুরে থাকতাম তখন ও আমার মার সঙ্গে ঝগড়া করত। মাকে একাধিকবার মেরেছেও। এসব কারণে আমি গত ১৬ আগস্ট তাকে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দেই।’
স্ত্রীর যৌতুকের অভিযোগ নিয়ে মোসাদ্দেক যুগান্তরকে বলেন, ‘দেখেন ওকে আমি গত ১৬ আগস্ট তালাক দিয়েছি। তার আগে ও কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। তালাক দেয়ার পর ও নাটক শুরু করেছে। আমার ক্যারিয়ার ধ্বংসের চক্রান্ত করছে।তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে এত খারাপ সময় আমার আসেনি যে যৌতুক নিয়ে আমার চলতে হবে। আমি শুনেছি যে ডিভোর্স দিলে নাকি এমন নারী নির্যাতন বা যৌতুকের একটা মামলা করা হয়। তারাও হয়তো তাই করেছে।’
স্ত্রীর কর্মকাণ্ডে হতাশ জাতীয় দলের এ অলরাউন্ডার যুগান্তরের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, ‘ছেলে হয়ে জন্মে ভুল করেছি। আজ মেয়েরা যা বলে তাই সত্যি হয়। আমাদের কথা কেউ সত্যি মনে করে না। রিপোর্ট থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এটি যুগান্তরের কোনো একটি প্রতিবেদন থেকে কপি করা হয়েছে । প্রতিবেদনের মধ্যে ‘যুগান্তর’ বা ‘যুগান্তরের সাংবাদিক’ এর কথা উঠে এসেছে।
এছাড়া, ১৬ আগস্ট ডিভোর্স এর খবর আজ ২৪শে জুলাই প্রকাশিত হওয়ায় প্রশ্ন জাগে, এটা কোন বছরের ১৬ই আগস্ট !
এই খবরের প্রথম অংশটা কপি করেই গাজী ২৪, বিডিনিউজশপ , ডেইলিরক্সি সহ কয়েকটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নতুন করে প্রকাশিত হয়েছে গত কয়েকদিনে । যুগান্তর এর মূল খবরের সাথে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের খবরগুলোর শতভাগ মিল রয়েছে।
তবে যুগান্তরের প্রতিবেদনে বাড়তি কিছু তথ্য পাওয়া গেল। যেমন -মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২০১২ সালে অনূর্ধ ১৯ দলের খেলোয়াড় থাকাকালীন অবস্থায় খালাত বোন সামিয়া শারমিন সুমিকে বিয়ে করেন। আর ২০১৮ সালের আগস্টে সৈকত সুমিকে ডিভোর্স দেওয়ার পরে সুমি ময়মনসিংহ আদালতে যৌতুকের অভিযোগে মামলা করেন।
সৈকতের স্ত্রী সামিয়া শারমিন এখানে যুগান্তরকে বলেন , সৈকতের দুর্দিনে আমি তার পাশে ছিলাম। তার অর্থ-খ্যাতি হওয়ার পর সে আমার সাথে বাজে ব্যবহার শুরু করে। মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও শুরু করে।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বর্তমান অবস্থা কি ?
২০২০ সালের ১২ই জুলাই করোনা মহামারীর মধ্যেই ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এই স্ত্রীর নাম উম্মে তামান্না। তার এই বিয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক যুগান্তর, সময় নিউজ, আলোকিত বাংলাদেশ সহ মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। সবগুলো খবরেই মোসাদ্দেকের প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে যৌতুকের মামলার কোনো সাম্প্রতিক তথ্য জানা যায়নি ।
সিদ্ধান্ত
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এর ডিভোর্স এর খবরটা সাম্প্রতিক নয়, বরং ২০১৮ সালের পুরনো খবর নতুন করে এখন ভাইরাল হয়েছে। তিন বছর আগের খবরটিকে এমন সহিংস ও নারীবিদ্বেষী উপায়ে প্রকাশ করার মাধ্যমে কতিপয় পোর্টাল পাঠকদের বিভ্রান্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?