গত ২৭ জুলাই ২০২৩ এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। এই দন্ডাদেশ কার্যকর কালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বাহিরে দাঁড়িয়ে সামগ্রিক অবস্থার নিউজ কভার করছিলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর একজন সাংবাদিক। এবার সেই কভারকৃত নিউজটিকে সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে শিবলী সাদিক হৃদয় নামক একজন কলেজছাত্রের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের খবর বলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, ১৩ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ প্রকাশিত কিছু সংবাদ মারফত জানা গেছে, হৃদয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেফতারকৃত আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অর্থাৎ, আসামিরা এখনও বিচারাধীন রয়েছেন এবং সম্পূর্ণ বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত আদালতের রায় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
শিবলী সাদিক হৃদয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে তাদের ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দাবিতে যে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে তার সত্যতা যাচাই করতে আমরা হৃদয় হত্যা মামলার সর্বশেষ অবস্থা কি তা জানার চেষ্টা করেছি। প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চের মাধ্যমে আজকের পত্রিকা, কালের কন্ঠ, এবং মানবজমিন কর্তৃক প্রকাশিত কিছু সংবাদ খুঁজে পাওয়া গেছে। উক্ত সংবাদগুলো পড়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে অপহরণ এবং হত্যার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিরা হলেন: সুইচিংমং মারমা, অংথুইমং মারমা, এবং অংথাই চিং মারমা। স্বীকারোক্তি শেষে তাদেরকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে, অপহরণ মামলার প্রধান আসামি উমং চিং মারমা জনতার গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। নিহত উমং চিং মারমাকে নিয়ে পুলিশ হৃদয়কে যে জায়গায় হত্যা করা হয়েছিলো তা শনাক্ত করতে গিয়েছিলো এবং সেখান থেকে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।
অতএব, হৃদয়কে অপহরণ এবং হত্যার সাথে জড়িতদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন এবং বাকি তিনজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। যেহেতু তারা বিচারাধীন রয়েছেন এবং সম্পূর্ণ বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আদালতের রায় সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু হৃদয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে বলে যে খবরটি ছড়ানো হচ্ছে তা সঠিক নয়।
এদিকে, গত ২৭ জুলাই ২০২৩ এ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুইজন আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের সামগ্রিক অবস্থা জানিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এবং ঐ খবরটিকে পরবর্তীতে হৃদয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার খবর বলে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হয়।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।