কুমিল্লার সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তির ছবি ভাইরাল হয়েছে। এসব ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, ‘কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন অবমাননায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার ।’ ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই আসামী কুমিল্লার ঘটনায় গ্রেফতার হননি, বরং কিছুদিন আগে ভিন্ন এক ঘটনায় চট্টগ্রামে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
১১ই অক্টোবর ফেসবুকের বিভিন্ন প্রফাইল থেকে প্রকাশিত ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে লাল গামছা পরিহিত এই ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। ( দেখুন এখানে, এখানে)
ভিডিওর বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১০ই অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাস্থ শিববাড়ি পুজার প্রতিমা বহনকারী ট্রাক কোতোয়ালি থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় উলটো পাশ থেকে আসা একটি জাম্বুরার ট্রাক থেকে একজন লেবার (শ্রমিক) একটি জাম্বুরা ছুড়ে মারে প্রতিমা লক্ষ্য করে। এসময় প্রতিমার হাত ভেঙে যায়। শিব বাড়ির ভক্তরা তাড়াতাড়ি ট্রাক থেকে নেমে একজনকে ধরতে পারলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়।
সে সময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এ সংক্রান্ত খবর থেকে ঘটনার সত্যতা জানা যায়। (যেমন- এখানে, এখানে , এখানে )
চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানা পুলিশ এর ফেসবুক পেজ থেকে ৩ আসামীর আনুষ্ঠানিক ছবি (mugshot) প্রকাশ করা হয়েছিল , যাদের মধ্যে প্রথমজনের সাথে এই ভাইরাল ছবির সাদৃশ্য দেখা যায়।
এই ছবির ব্যক্তিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতারের গুজব ভাইরাল হওয়ার পরে ভোলা জেলার তমিজুদ্দীন উপজেলার উক্ত ব্যক্তির কিছু পরিচিতজন ফেসবুকে পাবলিক স্ট্যাটাস লিখে জানান , তিনি ৩ দিন আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। (যেমন- এখানে, এখানে)
যেমন , Samsur Rhoman Shuvo লিখেছেন, নিচের ছবির লোকটি আমার এলাকা তজুমদ্দিন থানার একজন লোক, তিনি মোসলমান , কিন্তু তিনি কাজ করেন চট্রগ্রাম কতোয়ালি থানায় আরদের কাজ করে, যে কোন এক মূত্তি [মূর্তি] ভাঙ্গার ঘটনা কেন্দ কারনে [কেন্দ্র করে] আজ থেকে প্রায় ৩/ দিন আগে কতোয়ালি থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেন, যেই ছবিটি এখানে দিয়েছি সেই ছবিটি আজ থেকে প্রায় ৩দিন আগের, কিন্তু আজকে কুমিল্লায় যে ঘটনা হয়েছে, এবং যারা হিন্দুের পূজার মন্ডলে যারা আমাদের পবিত্র কোরআন রাখছেন, তিনি এই কুমিল্লার ঘটনার সাথে কোন ভাবে জরিত [জড়িত] না ।
তবে এসব স্ট্যাটাস থেকেও, বা অন্য কোনো সূত্রে, উক্ত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি।
অন্যদিকে, কুমিল্লা নানুয়ার দীঘির পাড়ের মন্দির নিয়ে আলোচিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ১৩ই অক্টোবর, যে দিন তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। কাজেই তার পক্ষে নতুন করে আটক হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গ : কুমিল্লা পুলিশ প্রশাসন
এই ছবিযুক্ত বেশ কিছূ পোস্টারে কুমিল্লা পুলিশ প্রশাসন এর নাম ও মনোগ্রাম দেখা যাচ্ছে ।
ফেসবুকে Comilla District Police নামে একটি আনভেরিফাইড ফেসবুক পেজ রয়েছে। এখানে কুমিল্লার পুলিশ এবং আইন শৃংখলা বিষয়ক বিভিন্ন সাম্প্রতিক পোস্ট দেখা যাচ্ছে। কোনো অপরাধী ধরা পড়লে এই পেজ থেকে আসামীর ছবি এবং অপরাধের বিবরণসহ পোস্ট দিতে দেখা যাচ্ছে। যেমন,১২ই অক্টোবর দীপ খান নামক ছিনতাইকারী গ্রেফতারের খবর দেখা যাচ্ছে এখানে।
তবে সাম্প্রতিক মন্দির-এর ঘটনায় কোনো আসামী গ্রেফতার নিয়ে কোনো পোস্ট এই পেজে নাই।
পেজের ইনফো সেকশন থেকে কুমিল্লা পুলিশের অফিসিয়াল ওয়েব এ্যাড্ড্রেস (https://cumilla.police.gov.bd/) পাওয়া গেল। এই ওয়েব সাইটের প্রেস রিলিজ কিংবা অন্য কোনো অংশেই সাম্প্রতিক গ্রেফতার সম্পর্কে কোনো খবর দেখা যাচ্ছেনা।
অন্যান্য ফ্যাক্ট-চেকারদের অনুসন্ধান
আলোচিত এই ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার এবং বুম বিডি এ সম্পর্কে ফ্যাক্ট চেক করেছে। তারাও এই দাবির সত্যতা খুজে পায়নি । বরং ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রতিমা ভাঙ্গার অভিযোগে আটক ব্যক্তিই কুমিল্লায় আটকের গুজব ছড়িয়েছে বলে তারা জানাচ্ছে।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত
এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে আলোচিত ছবির ব্যক্তি কোনোভাবেই কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার হননি, কিংবা ১৩ই অক্টোবরেও গ্রেফতার হননি ,বরং তিনি ভিন্ন একটি ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সার্বিক বিবেচনায় , এই খবরটিকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?