সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে অনেকগুলো দেশীয় অস্ত্র এবং মদের বোতল রয়েছে। মূল ঘটনা এই যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে প্রশাসন। শহীদ আব্দুর রব ও শাহজালাল হলে এই অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যমে সংবাদটি “চবির আবাসিক হল থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার” জাতীয় শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এই ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে, দেশীয় অস্ত্রগুলো শিবিরের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কোথাও এ কথা উল্লেখ নেই যে, শিবিরের কক্ষ থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। বরং একটি জাতীয় গণমাধ্যমে এ কথা উল্লেখ রয়েছে যে, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত হলগুলো সব ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। সেখানে সিট বরাদ্ধের কাজটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা করতো। আর ১৭ জুলাই আন্দোলন চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সে সময়ে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়টি তখন থেকে বন্ধ রয়েছে। তাই উক্ত ছবির সাথে শিবিরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার দাবিটি সত্য নয়।
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে সমকাল পত্রিকায় “চবির আবাসিক হল থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে থাকা বিস্তারিত তথ্য হলো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে প্রশাসন। ছাত্রদের শহীদ আব্দুর রব ও শাহজালাল হলে এই অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হলের বিভিন্ন কক্ষ থেকে ১৬টি রামদা, বেশকিছু লোহার রড, মদের বোতল ও লাঠিসোটা উদ্ধার করা হয়। সোমবার দুপুর ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত হলটিতে অভিযান চালানো হয়। হল প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল বডি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নিরাপত্তা দপ্তরের সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আসন বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে। তারই প্রেক্ষিতে যারা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছিল সেসব শিক্ষার্থীদের মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য হল কর্তৃপক্ষ সময় বেধে দিয়েছিল। তবে অনেক কক্ষের মালামাল নিতে কেউ আসেনি। সেইসব কক্ষে অভিযান চালিয়ে এসব দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে প্রশাসন। প্রসঙ্গত যে, এর আগে ৫ আগস্ট রাতেও হলগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল।
বলাই বাহুল্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হল চালু রয়েছে সাতটি। নিয়ম মেনে সর্বশেষ এসব হলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন মাসে। এরপর হলগুলোর দখল নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদের সাতটি হলের অধিকাংশ কক্ষই ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দখলে। কোন কক্ষে কে থাকবেন তা নির্ধারণ করতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কয়েক দফা চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বৈধভাবে হলে আসন বরাদ্দে ব্যর্থ হন।
তাছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে ১ জুলাই থেকে৷ ওইদিন থেকে পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছিলেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী ছাত্রলীগ হল ত্যাগ করার পরেও হলে নতুন করে শিক্ষার্থীরা সিট বরাদ্ধ এখনো পাননি। বরং সিট বরাদ্ধের কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত যে, ৫ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলবে। আর ৬ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সুতরাং শিবিরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার এ জাতীয় দাবিটি প্রমাণিত নয়। বরং যে কক্ষগুলো থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল তা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে ছিলো যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত।
সঙ্গত কারণে ভাইরাল ছবির সাথে শিবিরের নাম জড়িয়ে যে দাবিগুলো করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh