আর নয় লকডাউন, সারাদেশে দেয়া হচ্ছে “কারফিউ” – ভূয়া শিরোনাম ভাইরাল

10
আর নয় লকডাউন, সারাদেশে দেয়া হচ্ছে “কারফিউ” – ভূয়া শিরোনাম ভাইরাল আর নয় লকডাউন, সারাদেশে দেয়া হচ্ছে “কারফিউ” – ভূয়া শিরোনাম ভাইরাল

Published on: [post_published]

২৭ জুন ২০২১ তারিখে “এইমাত্র পাওয়াঃ আর নয় লকডাউন, সারাদেশে দেয়া হচ্ছে ‘কারফিউ’” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে একাধিক ওয়েব পোর্টাল। মূলত এটি একটি মিথ্যা শিরোনামযুক্ত সংবাদ যা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বাস্তবে সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে এবং আগামী ১ জুলাই থেকে সাত দিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করছে সরকার। একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এর আগে, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের  জন্য ‘শাট ডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করেছিল যেখানে ‘কারফিউ’ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত কারফিউ দেবার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি সরকার থেকে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জরুরি সেবা ছাড়া ১ জুলাই থেকে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।

উক্ত মিথ্যা শিরোনামযুক্ত সংবাদটি ২৭ জুন ২০২১ তারিখে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে শেয়ার হয়েছে যা বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে,  এখানে এবং এখানে।



 

ভূয়া সংবাদটির সূত্রপাত

“এইমাত্র পাওয়াঃ আর নয় লকডাউন, সারাদেশে দেয়া হচ্ছে ‘কারফিউ’” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদগুলোর বিস্তারিত অংশ ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, এগুলো গত ২৫ জুন ২০২১ তারিখে প্রকাশিত daily-bangladesh.com থেকে প্রকাশিত “‘কারফিউর’ মতো হতে পারে শাটডাউন” শিরোনামের একটি সংবাদ থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে।

সংবাদটি বলছে, “বুধবার জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভায় ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সারাদেশে শাটডাউন দেওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। শাটডাউন অনেকটা ‘কারফিউ’ জারি করার মতোই হবে।“

 

কারফিউ জারি’ নিয়ে কি সরকারি নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে আদৌ কোনো আলোচনা হয়েছিল?

এবিষয়ে দৈনিক কালের কন্ঠের একটি প্রতিবেদন বলছে, “করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে বুধবার সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বৈঠক করে কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সব মানুষকে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য ঘরবন্দি রাখার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। আর সেই কৌশলকেই পরামর্শ হিসেবে গ্রহণের জন্য জানিয়ে দিয়েছে সরকারকে। কমিটির সভায় এমন কঠোর পদক্ষেপকেই ‘শাটডাউন’ শব্দে প্রকাশ করা হয়েছে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান কালের কণ্ঠকে বলেন, “সভায় মূলত ‘কারফিউ’ নিয়েই আলোচনা হয়েছে, কিন্তু ওই শব্দটির সঙ্গে যেহেতু অনেক স্পর্শকাতর বিষয় জড়িত থাকে তাই ‘কারফিউয়ের’ সিভিল রূপ হিসেবে ‘শাটডাউন’ শব্দ বলা হয়েছে। “

jagonews24.com এর একটি প্রতিবেদন বলছে,

“পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৩ জুন কমিটির বৈঠককালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিরোধে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সারাদেশে ‘কারফিউ’ জারি করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।“

“কমিটির আরেক সদস্য বলেন, লকডাউন শব্দটি এখন হেলাফেলার হয়ে গেছে। লকডাউনের মধ্যেও গণপরিবহন চলছে, মার্কেট শপিংমলসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। এ কারণে তারা ‘কারফিউ’ শব্দটি প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।“

 

‘কারফিউ’র পক্ষে বেশ কয়েকজন জনস্বাস্থ্যবিদ

এদিকে ‘কারফিউ’ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বেশ কয়েকজন জনস্বাস্থ্যবিদ। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন: “৬৪ জেলার মধ্যে ৫০টি জেলা এখন রেডজোন। তাহলে এই ৫০টা জেলাতেই লকডাউন করতে গেলে পাশের জেলা ফাকা থাকলে সেখানে ছড়াবে। সারা দেশেই আগামী ১৪ দিন কমপ্লিট কারফিউ যদি দেয়া হয়। লকডাউন শব্দটি আমরা আর ব্যবহার করবো না। এটার অর্থ এখন সবার কাছে অন্যকিছু। কারফিউ দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখলে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।

কিছুদিনের জন্য কারফিউ দেবার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ।

 

 

কারফিউ কি?

কারফিউ বা বাংলায় ‘সান্ধ্য আইন’ হচ্ছে এমন এক ধরনের আইন যেখানে কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করা হয়। বিশেষত যুদ্ধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় দেশের প্রত্যেক সাধারণ নাগরিককে নিজের বাসস্থানে অবস্থান নিশ্চিত করতে এটি ঘোষণা করা হয়।

 

৩ দিনের লকডাউনে কী কী খোলা থাকবে এবং কী কী বন্ধ থাকবে?

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে আজ থেকে শুরু হওয়া প্রথম ৩ দিন কঠোর লকডাউনের বিধি-নিষেধে কী কী খোলা থাকবে, কী কী বন্ধ থাকবে, তা জানিয়েছে সরকার।

নির্দেশনা অনুযায়ী

সোমবার থেকে পণ্যবাহী গাড়ি ও রিকশা ছাড়া সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।

সব শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা নাগাদ শুধু খাবার বিক্রি করতে পারবে।

সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খোলা থাকবে সীমিত জনবল নিয়ে। সেই সব কর্মচারীদের অফিসের ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে।

১ জুলাই থেকে ঘর থেকেও বের হওয়া যাবে না, টহলে থাকবে সেনাবাহিনী

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামী ১ জুলাই ২০২১ তারিখ থেকে জরুরি সেবা ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। এই কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে টহলে থাকবে পুলিশ, বিজিবি, ব্যাটালিয়ন পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনী। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, “১ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৭ জুলাই রাত ১২ পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। তবে প্রয়োজন মনে হলে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে। বিধিনিষেধ চলাকালে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না (জরুরি সেবা ছাড়া) বলেও উল্লেখ করেন তিনি।“

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

 

 

 

 

No Factcheck schema data available.