ঘূর্ণিঝড় বেরিল বাংলাদেশে আঘাত হানবে?

58
ঘূর্ণিঝড় বেরিল বাংলাদেশে আঘাত হানবে?
ঘূর্ণিঝড় বেরিল বাংলাদেশে আঘাত হানবে?

Published on: [post_published]

আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া ‘বেরিল’ নামক শক্রিশালী ঘূর্ণিঝড়টি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে আঘাত করতে যাচ্ছে শিঘ্রই। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর, বুলেটিন এবং আপডেট প্রতিনিয়ত প্রচারিত হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশেও মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এসব খবরের মাঝে কিছু থ্রেডস ব্যবহারকারী মনে করছেন, ঘূর্ণিঝড় বেরিল বাংলাদেশেই আঘাত হানতে যাছে। তাদের উদ্বেগের কথা তারা থ্রেডসে জানান দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলসহ সকল অঞ্চলের মানুষদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বাংলাদেশে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের জন্য কোনো সতর্কতা বার্তা দেয়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এ সকল পোস্টকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরে গত ২৯শে জুন একটি মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়, যাকে ‘বেরিল’ (Beryl) নামকর করা হয়। এটি খুব কম সময়ের মধ্যে অনেক বেশি শক্তি সংগ্রহ করে ১ জুলাই তারিখে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে জুম আর্থ এর ম্যাপ থেকে দেখা যাচ্ছে যে  ঘূর্ণিঝড়টি গ্রেনাডার খুব নিকটে অবস্থান করছিল। গ্রেনাডা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস , বার্বাডোস, সেন্ট লুসিয়া, মার্টিনিক, টোবাগো , ডোমিনিকা ইত্যাদি দেশে ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে এই বেরিল বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট কোনো ঘূর্ণিঝড় নয়। এবং এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশে বা উপমহাদেশের কোনো দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা, বরং বিশ্বের অপর প্রান্তের ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ১লা জুলাই ২০২৪ তারিখে আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা এর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৫ দিনে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।  

“একই ওয়েবসাইটে, ৩০শে জুন,২০২৪ তারিখে জারি করা আবহাওয়াবিদ মো মনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবল রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে ও বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর,বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম,কক্সবাজার,মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।”

“আবহাওয়া প্রতিদিন” নামক ফেসবুক পেজ থেকে ১লা জুলাই তারিখে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোঃ ওমর ফারুক এর সস্বাক্ষর করা আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতেও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

অর্থাৎ,বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোনো বিজ্ঞপ্তিতেই নিম্নচাপ বা লঘুচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়নি। কেবলমাত্র দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রসুঙ্গত উল্লেখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো’র ইস্যু করা ঘূর্ণিঝড় ও আবহাওয়ার নতুন সতর্ক সংকেত এবং গনদুর্যোগ বার্তা  নামক পুস্তিকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,এটি সমুদ্র বন্দর, উপকূলীয় অঞ্চল ও নদী বন্দরের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর ফলে বন্দর ও বন্দরের আশেপাশের এলাকায় ঘন্তায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগের ঝরো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঝড়ো হাওয়ার কারনে উত্তর বঙ্গোপসাগরে এবং নদীতে চলাচলকারী ৬৫ ফুট এবং এর কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌ-যানগুলোকে অতি সত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।

অর্থাৎ, এই ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত কোনো ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত নয়, এটা নিশ্চিত।

থ্রেডসে শেয়ারকৃত এমন দুটো পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে


কাজেই যেসকল থ্রেডস ব্যবহারকারী বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের জারি করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতকে ঘূর্ণিঝড় বেরিল (বা অন্য কোনো ঘূর্ণিঝড়) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে দাবি করছেন, তাদের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট কিংবা দেশের অন্যত্র যে ভারি বর্ষণ চলছে, তাঁর সাথেও ঘূর্ণিঝড় বেরিল এর সম্পর্ক নেই, বরং এটি দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হচ্ছে।

সার্বিক বিবেচনায়, থ্রেডসে ছড়িয়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় বেরিল এর বাংলাদেশে প্রভাব সংক্রান্ত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.