সম্প্রতি “দশ বছর পরেও একজন কুরআনের হাফেজের লাশ অক্ষত অবস্থায় আছে” — দাবি করে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওর ব্যক্তিটি ১৭ জুলাই, ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর তিনদিন পর লাশ যখন তার পরিবারকে হস্তান্তর করা হলো তখন এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়। এর আগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করার সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুরনো এই ভিডিওটি সম্প্রতি ভুল শিরোনামে ভাইরাল হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
১ মিনিট ১০ সেকেন্ড দৈর্ঘের এই ভিডিওতে লাশের ব্যাগ থেকে লাশটি বের করতে দেখা যায়। লাশটিকে ঘিরে অনেক মানুষকে আবেগাক্রান্ত হতে দেখা যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্যাপশনে বলা হয়, একজন হাফেজে কুরআনের লাশ দশ বছর পরেও অক্ষত অবস্থায় আছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভাইরাল এই ভিডিও থেকে নেওয়া স্থিরচিত্রের মাধ্যমে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে “Fatabyyano” নামে একটি তথ্য অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদন সামনে আসে।
আরবি ভাষার এই প্রতিবেদনটি অনুবাদ করলে দেখা যায় সেখানে বলা হচ্ছে, ভিডিওর ব্যাক্তির নাম ইয়াসির বিন তামরিন। ইন্দোনেশিয়ার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৩০ অক্টোবর, ২০১৭ সালে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ১৭ জুলাই, ২০১৮ সালে যকৃতের সমস্যা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার এক হাসপাতালে মারা যান। এর তিনদিন পর তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয় এবং তখনই এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
অর্থ্যাৎ, সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি দশ বছর নয়, মাত্র তিনদিন আগে মারা যাওয়া একটি লাশের।
এর আগে মালয়শিয়ায় একই ভিডিওকে ইমাম সামুদেরার লাশ ১০ বছর পরেও অক্ষত আছে দাবি করে প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে “Viva.co.id” এর একটি প্রতিবেদনে পুলিশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয় ভিডিওর ব্যাক্তিটি ইমাম সামুদেরা নন বরং ইয়াসির বিন তামরিন। জেনারেল মুহাম্মদ ইকবাল বলেন, ইয়াসির বিন তামরিন সাউথ তাংয়েরাং রিজিওনাল হাসপাতালে, মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮ এ মালয়েশিয়ার সময় সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ এ মৃত্যুবরণ করেন।
এএফপি ফ্যাক্টচেকও এই গুজবটি ফ্যাক্টচেক করেছে এর আগে। তাদের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
তবে এই ব্যাক্তি কুরআনের হাফেজ ছিলেন কি না এ বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বৈজ্ঞানিকভাবে মৃত শরীর এতদিন অক্ষত অবস্থায় থাকে না। মারা যাওয়ার প্রায় চার মিনিট পর থেকেই পচন শুরু হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে।
সুতরাং, বিষয়টি পরিষ্কার যে, ভিডিওর ব্যক্তির লাশটি ১০ বছর পরে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। বরং মৃত্যুর তিনদিন পরের লাশ এটি। মৃত ব্যাক্তির নাম ইয়াসির বিন তামরিন এবং তিনি সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার ছিলেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচ পুরনো ভিডিওর সাম্প্রতিক এই দাবিকে মিথ্যা চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?