এ মাসের শুরুর দিক থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) এবং বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর প্রেক্ষিতে ফটোকার্ড আকারে প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্টে কোনো সূত্র উল্লেখ না করে দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘর্ষে ১ জন বাংলাদেশি আহত এবং ১৮ জন ভারতীয় নিহত হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, ১১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যদের গুলি এবং ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় কমপক্ষে ৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন, কিন্তু কোনো ভারতীয় নাগরিক আহত বা নিহত হননি। ভারতীয় গণমাধ্যমেও কোনো ভারতীয় নাগরিকের আহত বা নিহত হবার তথ্য আসেনি। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ১৮ জন ভারতীয় নিহত হওয়ার তথ্য ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে।
গণমাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে অনুসন্ধানে, প্রথম আলোর ১১ জানুয়ারির প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আজমতপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মো. শহিদুল ইসলাম (২২) নামক একজন বাংলাদেশি তরুণ গুরুতর আহত হয়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে ফেনসিডিল নিয়ে আসার পথে ভারতের ভেতরে বিএসএফের গুলিতে শহিদুল ইসলাম আহত হন, এবং আহত অবস্থায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রথম আলোর ১৩ জানুয়ারির আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ১২ জানুয়ারি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে শহিদুল ইসলাম (৪২) নামের একজন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। ভারতের গরু চোরাকারবারিদের সহায়তায় গরু নিয়ে ফেরার পথে ভারতের ভেতর বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে তিনি আহত হন। সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে যুগান্তরের ১৯ জানুয়ারির প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গাছ কাটতে থাকেন। এতে ক্ষিপ্ত বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় ভারতীয় নাগরিকরা হাঁসুয়া ও লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশিদের ওপর চড়াও হয়। তাদের ছোঁড়া পাথর ও অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৫ জন বাংলাদেশি গুরুতর আহত হন।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনেই ভারতীয় নাগরিক আহত বা নিহত হবার সংবাদ পাওয়া যায় না। ভারতীয় গণমাধ্যমেও সীমান্ত সংঘর্ষে ভারতের কোনো নাগরিক অথবা বিএসএফ সদস্যের আহত বা নিহত হওয়ার খবর খুঁজে পাওয়া যায় নি।
এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, কোনোরকম সূত্র ছাড়াই ফেসবুকে সীমান্ত সংঘর্ষে ১৮ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার মিথ্যা খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভিত্তিহীন দাবিটিকে “মিথ্যা” আখ্যা দিচ্ছে।
Claim: এ মাসের শুরুর দিক থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) এবং বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর প্রেক্ষিতে ফটোকার্ড আকারে প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্টে কোনো সূত্র উল্লেখ না করে দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘর্ষে ১ জন বাংলাদেশি আহত এবং ১৮ জন ভারতীয় নিহত হয়েছে।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh