যা দাবি করা হচ্ছে- চট্রগ্রামে ছাদ থেকে পড়া ছাত্রলীগ নেতা (দিমান) ধীমান সেন গুপ্ত নিহত!
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে- গত ১৬ই জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় সংঘটিত এই ঘটনায় ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ধীমান সেন গুপ্ত সহ প্রায় ১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ধীমান সেনগুপ্তের মৃত্যুর খবরটাকে গুজব হিসেবে চিহ্নিত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।
গুজবের উৎস
১৭ই জুলাই রাত ১২টা ২৮ মিনিটে জনৈক শাহব উদ্দিন এক আহত যুবকের ছবি আপলোড করে ক্যাপশনে লেখেন, আলহামদুলিল্লাহ চট্রগ্রামে ছাদ থেকে পড়া ছাত্রলীগ নেতা “দিমান সেন গুপ্ত।”নিহত।
১৭ই জুলাই সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রাণে বাঁচতে ভবন থেকে লাফ, ৪ ছাত্রলীগ নেতা আহত শীর্ষক খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় একটি ভবন থেকে নিচে পড়ে চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। সংস্কার আন্দোলনের কর্মীদের হামলার হাত থেকে রক্ষা পেতে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে নামার সময় তারা পড়ে যান। এর আগে তাদের পাথর ছুড়ে গুরুতর আহত করা হয়। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মুরাদপুর এলাকার বেলাল মসজিদ গলির মিরদাদ ম্যানসনের ছাদে এই ঘটনা ঘটে। ওই চারজনই ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মী। তাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা জালাল উদ্দীন জুবায়ের ও ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ধীমান সেন গুপ্ত। তারা দুইজনই মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও যুবলীগ নেতা নুরুল আজম রনির অনুসারী।
১৭ই জুলাই তারিখে বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর ডট কম এ প্রকাশিত ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের ফেলে দেওয়ার অভিযোগ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় একটি ভবনের ৫ম তলার ছাদ থেকে পড়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- মো. জালাল উদ্দিন জুবায়ের, আব্দুল্লাহ আল সাইমুন, ওয়াহিদুল রহমান সুজন, ইরফানুল আলম, জাহেদ অভি, মেহরাজ সিদ্দিকী পাভেল, জাবেদ ইকবালসহ ১৫-২০ জন। তারা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইয়াসির আরাফাত রিকু নামের আরেকজনকে ভর্তি করা হয়েছে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভেরিফাইড ফেসবুকে পেজ থেকে ১৭ই জুলাই রাত ৯টা ৪ মিনিটে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। তবে এখানে ধীমান সেনগুপ্ত নামের আহত কোনো কর্মীর উল্লেখ ছিল না।
এদিকে, বাংলা ট্রিবিউনে ১৮ই জুলাই সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রকাশিত পাঁচ তলা থেকে ফেলে দেওয়া ছাত্রলীগের কর্মীরা কেমন আছেন? শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের মুরাদপুর উপজেলায় মঙ্গলবার কোটাবিরোধী আন্দোলনকালীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ চলাকালে একটি ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের ১৫ জন নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়া হয়। এতে তারা সবাই গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পার্কভিউ হাসপাতালে।
চিকিতসাধীন এই ১৫ জনের মধ্যে ৭ জনের নাম এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হল- সুদীপ্ত পাল , মেহেদী হাসান, জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ জুবায়ের, মো. আলমগীর হোসেন, মো. সোহেল , শ্রাবণ ও ইমন ধর। অবশিষ্ট ৮ জনের নাম এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি, এবং এই ৭ জনের তালিকায় ধীমান সেনগুপ্তের নাম নেই।
তবে এসকল প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে মুরাদপুরের এই ঘটনায় এখনো কেউ নিহত হয়নি।
চলমান সংঘাতে গত ১৬ই জুলাই চট্টগ্রামে ৩ জন নিহত হয়েছিলেন। এরা হলেন, চট্টগ্রাম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র ও কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম, এম ই এস কলেজের ছাত্র ফয়সাল এবং মুরাদপুর এলাকার ফার্নিচার দোকানের কর্মী ওমর ফারুক। এ সংঘাতে চট্টগ্রামের কোনো যুবলীগ কর্মীর কোনো মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের ফেসবুক পেজ থেকেও চট্টগ্রামে কোনো দলীয় কর্মীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ ধীমান সেনগুপ্তের মৃত্যুর দাবিযুক্ত এ সকল পোস্টকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।