ভারতের দিল্লীর মসজিদে আগুন দিয়ে হিন্দুরা অনেক মুসলিমদের মেরে ফেলেছে-এমন দাবি সম্বলিত কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এগুলো ভিন্ন একটি ঘটনার দুই বছর আগের ছবি। সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লীর কোনো মসজিদে আগুনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এই পোস্টে সাদা কাপড়ে ঢাকা সারি সারি শরীরের দু’টি ছবি দেখা যাচ্ছে। সাদা কাপড়ের বিভিন্ন জায়গায় ইংরেজি এবং হিন্দিতে বিভিন্ন স্লোগান দেখা যাচ্ছে। আলাদা কয়েকটি ব্যানারও দেখা যাচ্ছে সারি সারি শরীরের মধ্যে। এমনই একটি ব্যানারে ইংরেজিতে CAA এবং NRC লেখা দেখা যাচ্ছে।
তবে এসকল ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে 😭😭
হে মালিক দিল্লির মসজিদে যেসব হিন্দুরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে আমার ভাইদের শহীদ করেছে, তুমি শহীদি ভাইদের রক্তের বিনিময়ে ভারতের শাসন ক্ষমতা মুসলমানদের হাতে কবুল করে মোদী সরকারকে ফেরাউনের মতো পতন ঘটিয়ে দাও। ⛈⛈
আমিন সুম্মা আমিন
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের দিল্লীতে কোন মসজিদে আগুনের খবর অনুসন্ধানে জানা যায়নি।
তবে ভাইরাল হওয়া এই ছবিগুলো দিল্লীর দাঙ্গায় নিহতদের ছবি নয়। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এটা ২০২০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদে অনুষ্ঠিত Citizenship (Amendment) Act (CAA) এবং National Register of Citizens (NRC) আইন বিরোধী বিক্ষোভের ছবি।
এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সাদা কাফনের কাপড় এবং সাদা পোষাক পরে রাস্তায় শুয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। উল্লেখ্য ,সে সময়ে ভারতের বিভিন্ন এলাকাতেই CAA এবং NRC কে ঘিরে বিতর্ক ও বিক্ষোভ চলছিল। সেসময়ে দিল্লীর দাঙ্গার সূত্রপাত ও হয়েছিল CAA বিরোধী বিক্ষোভ থেকেই।
এই ছবিগুলোকে দিল্লীর মসজিদে আগুনে নিহতদের লাশ হিসেবে ২০২০ সালেই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। বুম লাইভ তখন এই গুজব খণ্ডন করেছিল।
এই একই ছবিগুলোকে ২০২১ সালে কাশ্মীরে নিহত মুজাহিদদ্দের ছবি বলে গুজব ছড়িয়েছিল। সে সময়ে বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা এই গুজব খণ্ডন করেছিল। যেমন- অল্ট নিউজ ,দ্য কুইন্ট ইত্যাদি ।
২০২১ সালে পাকিস্তানের একটি মসজিদ দুর্ঘটনায় নিহতদের ছবি হিসেবেও পুরনো এই ছবিটাকে ভুলভাবে দাবি করা হয়েছিল। এএফপি তখন এই গুজব খণ্ডন করেছিল।
অর্থাৎ এটা বোঝা যাচ্ছে, কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করার এই ছবিটা ঘিরেই বিভিন্ন সময়েই বিভিন্ন গুজব ছড়িয়েছে। তবে এটা কোনোভাবেই বর্তমান সময়ের কিংবা অতীতের দিল্লীর মসজিদে আগুনে নিহত মুসল্লিদের ছবি নয়।
তাই ফ্যাক্ট ওয়াচ এই ছবি-সম্বলিত পোস্টের দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?