ফেসবুকে যা ছড়াচ্ছেঃ বাংলাদেশের একটি ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা “নগদ” বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এর মালিকানা বোর্ডের একাধিক সদস্য তাদের পদত্যাগ পত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দিয়েছেন।
আসল ঘটনাঃ দাবিটি মিথ্যা। প্রথমত, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে এই তথ্যের কোনো উৎস উল্লেখ করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা অন্য নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে উক্ত দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তৃতীয়ত, নগদের পক্ষ থেকেও এমন কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। বরং, নগদ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা একটি পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে যে, এগুলো নগদের বিরূদ্ধে করা ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ
নগদ হচ্ছে বাংলাদেশের একটি ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা যার মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার, মোবাইল রিচার্জ, বিল পরিশোধ, অনলাইন কেনাকাটা এবং নগদ টাকা তোলার মতো বিভিন্ন পরিষেবা নেয়া যায়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে দাবি করা হচ্ছে এই নগদ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এর মালিকানা বোর্ডের একাধিক সদস্য তাদের পদত্যাগ পত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দিয়েছেন। এই মালিকানা বোর্ডের সদস্যরা হলেন, মারুফুল ইসলাম ঝলক, নিয়াজ মোর্শেদ এবং নাহিম রাজ্জাক। কিন্তু পোস্টগুলোতে এই তথ্যের উৎস সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু, অনুসন্ধানে এই দাবিটির সমর্থনে সরাসরি নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১২ আগস্ট ২০২৪ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, নগদের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, লাইসেন্স বাতিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুমোদন প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৯ আগস্ট ২০২৪ এ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন। এর পরে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু এই পদে যোগদান করার পরে তিনি নগদের লাইসেন্স বাতিল করেছেন কি না — নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে এ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, ডিবিসি নিউজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১২ আগস্ট ২০২৪ এ “আর্থিকখাত অস্থিতিশীল করতে নগদের বিপক্ষে চক্রান্ত হচ্ছে” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ১২ আগস্ট ২০২৪ এ নগদের দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে ভিত্তি করে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নগদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নগদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও ১২ আগস্ট ২০২৪-এ ডিবিসি নিউজের এই প্রতিবেদনটি আপলোড করা হয়।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।