সম্প্রতি ফেসবুকে ৩৩ জন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্য নিখোঁজের একটি দাবি ভাইরাল হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, টেকনাফের নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে এই বিজিবি সদস্যরা নিখোঁজ হয়েছেন। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, টেকনাফে ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নিখোঁজের দাবিতে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। মূলত, মুদ্রপথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার জেটির কাছে রোহিঙ্গাদের একটি নৌকা ডুবে যায়। এ নৌকা উদ্ধারে গিয়ে বিজিবির এক সদস্য সমুদ্রে নিখোঁজ হন। এ ঘটনাকেই ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নিখোঁজের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে গতকাল শনিবার (২২ মার্চ) দৈনিক ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফের সমুদ্র উপকূলে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টার সময় রোহিঙ্গাদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। এ ঘটনায় শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে, একজন বিজিবি সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমানকে উদ্ধৃত করে ডেইলি স্টার জানায়, ঘটনার খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। উদ্ধার অভিযানে যাওয়া একজন বিজিবি সদস্য সমুদ্রে নিখোঁজ হন। নৌকাটি উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একই ঘটনা নিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর তাদের প্রতিবেদনে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নানকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, তিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবহনকারী একটি ট্রলার ডুবির ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ থাকার খবর পেয়েছেন।
নৌকাডুবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গভীর রাতে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া বরাবর রোহিঙ্গাবহনকারী একটি নৌকা অনুপ্রবেশের সময় ডুবে যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় অন্য নৌকায় উদ্ধার করতে যাওয়া বিজিবির এক সদস্যও নিখোঁজ থাকার খবর জেলেরা অবহিত করেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেনেছি।’
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিখোঁজ এই বিজিবি সদস্যের পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়। তার নাম মোহাম্মদ বেলাল (২৮), তিনি বিজিবির সিপাহি। মোহাম্মদ বেলাল টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
পরে আরও খুঁজে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দাবিটি নিয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। গতকাল শনিবার রাত ১১ টার দিকে দেওয়া এই পোস্টটিতে দাবিটি সম্পর্কে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, গত দুই দিন হয় ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবনির্ভর এই অপপ্রচারে বিজিবির দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই তথ্যটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
পোস্টটিতে আরও বলা হয়, ‘গতকাল ২২ মার্চ ভোররাতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া ঘাটের নিকট দিয়ে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অবৈধ উপায়ে সাগরপথে বাংলাদেশে আসার সময় প্রবল স্রোতের কারণে উল্টে যায়। খবর পেয়ে সৈকতের পার্শবর্তী (পার্শ্ববর্তী) স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা তৎক্ষণাৎ স্থানীয় জেলেদেরকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের জন্য ছুটে যায় এবং ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকার্য চলাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং অন্ধকার রাতের কারণে একজন বিজিবি সদস্য সম্ভাব্য পা পিছলে পড়ে সমুদ্রে নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে ডুবে যাওয়া নৌকাসহ ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বিজিবি।’
পোস্টটিতে নিখোঁজ ওই বিজিবি সদস্যের খোঁজে উদ্ধার অভিযান চলমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দাবিটি সম্পর্কে আরও জানতে ফ্যাক্টওয়াচ থেকে কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক মাইনুদ্দীন হাসান সাহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, এই ঘটনায় একজনই বিজিবি সদস্য নিখোঁজ হয়েছে।
এ ছাড়া দেশীয় কোনো সংবাদমাধ্যমেও নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নিখোঁজের দাবিটি নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নিখোঁজের দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
Claim: সম্প্রতি ফেসবুকে ৩৩ জন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্য নিখোঁজের একটি দাবি ভাইরাল হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, টেকনাফের নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে এই বিজিবি সদস্যরা নিখোঁজ হয়েছেন।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh