৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে “হোটেলে খাসি বলে খাওয়ানো হচ্ছে কুকুরের মাংস, ১১০০ কেজি কুকুরের মাংস উদ্ধার” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করেছে insafbd24.com নামক একটি অনলাইন পোর্টাল। মূলত খবরটি বাংলাদেশের নয়, বরং প্রায় আড়াই বছর আগে ভারতের কোলকাতা এবং চেন্নাইয়ের হোটেলে কুকুর, বিড়ালের মাংস সরবরাহের দুটি পৃথক ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
সম্প্রতি “হোটেলে খাসি বলে খাওয়ানো হচ্ছে কুকুরের মাংস, ১১০০ কেজি কুকুরের মাংস উদ্ধার” শিরোনামে খবরটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ থেকে শেয়ার হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে,এখানে এবং এখানে।
ভাইরাল হওয়া খবরটির বিস্তারিত অংশ ধরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এটি ২৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে জাগো নিউজ থেকে প্রকাশিত একটি খবরকে হুবহু কপি করা হয়েছে। খবরটির বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, “লোকচক্ষুর আড়ালে কাটা হচ্ছে কয়েক সপ্তাহ আগের মরাগলা বিড়াল-কুকুর। এই খবর জানাজানি হতেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে এক পাচারকারী। আটক ব্যক্তি বলেছেন, কলকাতার মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে, যশোর রোডের দু’ধারের একাধিক রেস্তোরাঁয় কুকুর-বিড়ালের মাংস সরবরাহ করেন তারা। ওই ব্যক্তি আরো বলেন, কুকুর-বিড়ালের মাংসকে খাসির মাংস বলে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁতে দেয়া হতো। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বাড়ি কলকাতার দেগঙ্গার বিভিন্ন এলাকায়।“
একই বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ভারতের কোলকাতায় ভাগাড়ে ফেলে যাওয়া কুকুর-বেড়ালের মাংস রেস্তোরাঁয় সরবরাহকে কেন্দ্র করে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এমন কিছু সংবাদ দেখুন এখানে,এখানে,এখানে এবং এখানে।
সেই একই বছরের নভেম্বর মাসে ভারতের চেন্নাইয়ে মোট ১১টি প্যাকেটে প্রায় ১১০০ কেজি কুকুরের মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ১৯ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত যুগান্তরের একটি সংবাদ বলছে, “রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের (আরপিএফ) কর্মকর্তারা গিয়ে প্যাকেটগুলোতে তল্লাশি চালায়। আরপিএফের উপপরিদর্শক এস কৃষ্ণন এবং এ ভাস্করণ সেগুলো জব্দ করেন। ফুড সেফটি কর্মকর্তারা পরে সেগুলো পরীক্ষা করেন। ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জবাই করা কুকুরগুলো হোটেলে সরবরাহের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।“
এদিকে ভাইরাল হওয়া খবরগুলোতে ব্যবহৃত ছবিটি গুগল রিভার্স ইমেইজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথক ঘটনায় উক্ত ছবিটি তথ্যসূত্র ছাড়াই ব্যবহৃত হয়েছে।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি হোটেলে বিরিয়ানিতে কুকুরের মাংস ব্যবহারের অভিযোগে হোটেল মালিক গ্রেপ্তারের ঘটনায় উক্ত ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে।
আবার ৩ মে ২০১৬ তারিখে একটি ইরানি অনলাইন পোর্টাল থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবেদনটি ছিল ইরানের লস্করাবাদে কুকুরের মাংস বিক্রি এবং রান্নার ছবি সাইবার স্পেসে ছড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে।
৭ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে “ঢাকার হোটেলে কুকুরের মাংসের কাচ্চি বিরিয়ানি!” শিরোনামে একটি সংবাদে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
উক্ত তথ্য-প্রমাণাদি সাপেক্ষে বিষয়টি স্পষ্ট যে, “হোটেলে খাসি বলে খাওয়ানো হচ্ছে কুকুরের মাংস” শীর্ষক খবরটি বাংলাদেশের নয়, বরং প্রায় আড়াই বছর আগে ভারতের কোলকাতা এবং চেন্নাইয়ের হোটেলে কুকুর, বিড়ালের মাংস সরবরাহের দুটি পৃথক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। খাবারের মতন স্পর্শকাতর বিষয়ে পুরনো ঘটনাকে নতুন করে প্রকাশের কারণে ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া খবরটি বিভ্রান্তিকর।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?