দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এর ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, তিনি বলেছেন যে “বিএনপি ক্ষম’তায় যাবে”। তবে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে ডোনাল্ড লু কে মানবাধিকার পরিস্থিতি, র্যাব, শ্রম অধিকার এবং ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এছাড়া এমন দাবিতে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেখানেও ডোনাল্ড লুকে এমন মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। বরং ভিডিওতে মন্তব্যটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বলে দাবি করা হচ্ছে।
ভাইরাল এই শিরোনামের সাথে থাকা মূল খবরটি লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, সেখানে ডোনাল্ড লু এর এমন কোনো মন্তব্য নেই। বরং সেখানে বলা হচ্ছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মন্তব্য এটি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-অ্যাাব আয়োজিত একটি সভার সূত্র দিয়ে এই কথা বলা হয়।
পরবর্তীতে এমন দাবির সত্যতা অনুসন্ধান করা হলে ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ এ দৈনিক যুগান্তর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “বিএনপি ক্ষমতায় যাবে” শিরোনামের এই প্রতিবেদনে গয়েশ্বর রায়ের এই মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে গয়েশ্বর রায়কে উদ্ধৃত করে বলা হয়,“বিএনপির প্রস্তাবে আছে দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এ প্রস্তাবটি দুইবারের বেশি কেউ মন্ত্রী-এমপি হতে পারবেন না- এ পর্যন্ত বিস্তৃত করলে রাজনীতিবিদরা তো এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় যাবে কিন্তু তার আগে প্রস্তুতি নিতে হবে। অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা, প্রতিহিংসার মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।“
এছাড়া জানুয়ারি ১৪ এ প্রকাশিত ভাইরাল এই ভিডিওতে ডোনাল্ড লু এর ঢাকা সফর নিয়ে কয়েকটি ধারণাপ্রসূত মন্তব্য করা হয়। তিনি কি কি বিষয়ে কথা বলবেন কিংবা আলাদা কোনো পদক্ষেপের কথা বলবেন কি না সেরকম কিছু কথা বলা হয়। কিন্তু মূল সফরে কি আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
অর্থ্যাৎ, ভাইরাল এসব ফেসবুক পোস্টের শিরোনামে ডোনাল্ড লু এর মন্তব্য হিসেবে এটি দাবি করা হলেও মূল খবরে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এরপর সম্প্রতি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এর ঢাকা সফরে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কি না অনুসন্ধান করা হলে, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে এটিএন বাংলার একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে ডোনাল্ড লু এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের তাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে লু কে আলাদাভাবে বিএনপি বা কোনো রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, র্যাব, শ্রম অধিকার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে কথা বলেন তিনি।
প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে, ডোনাল্ড লু এর সাথে সাক্ষাৎকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, তারা (ডোনাল্ড লু এবং তার সহকর্মী) কোনো দলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন না কখনো। সেখানে নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের সাথে কথা হয়েছে।
লু এর সফর নিয়ে প্রথম আলো প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
সুতরাং, পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে ডোনাল্ড লু এর এমন মন্তব্যের কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভাইরাল এই ভিডিওতেও ডোনাল্ড লু এর এমন মন্তব্যের উল্লেখ নেই। ভুল শিরোনামে এমন দাবিটি ভাইরাল হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় উক্ত শিরোনামকে মিথ্যা চিহ্নিত করা হচ্ছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?