সাতদিনে ওজন কমানোর কথিত ‘স্লিম জুস’ এর বিজ্ঞাপনে ডাক্তার তাসনিম জারা’র (Tasnim Jara) ছবি ব্যবহার করতে দেখা গেছে ফেসবুকের বেশ কিছু ভাইরাল পোস্টে। তবে, ডাক্তার তাসনিম জারা তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করে জানিয়েছেন যে, তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার করে প্রতারকরা অনলাইনে ওজন কমানোর প্রোডাক্ট, মোটা হওয়ার প্রোডাক্ট, পাইলসের সমাধান, লম্বা হওয়ার ওষুধ প্রভৃতি বিক্রি করার চেষ্টা করছে। উক্ত প্রোডাক্টগুলো ব্যবহারের ফলে আর্থিক ক্ষতি এবং শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে – এই কথা ব্যক্ত করে তাসনিম জারা সবাইকে সাবধান হতে বলেছেন। তাছাড়া, ভেরিফাইড নয় এমন কোন ফেসবুক পেইজ থেকে তাঁর নাম ব্যবহার করে বিক্রিত হওয়া পণ্য ব্যবহার করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ডাক্তার তাসনিম জারা’র ছবি ব্যবহার করে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ওজন কমানোর কথিত জুসের বিজ্ঞাপনের সাথে ডাক্তার তাসনিম জারা’র কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে আমরা তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে গত ২৪ নভেম্বর ২০২৩ এ শেয়ারকৃত একটি পোস্ট খুঁজে পেয়েছি। পাঠকদের সুবিধার্থে উক্ত পোস্টটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:
“আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ওজন কমানোর প্রোডাক্ট, মোটা হওয়ার প্রোডাক্ট, পাইলসের সমাধান, লম্বা হওয়ার ওষুধ, যৌন রোগের সমাধান ইত্যাদি বিক্রির চেষ্টা করার হচ্ছে অনলাইনে। এগুলো প্রতারকদের কাজ। আমরা এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
আপনারাও এদের থেকে সাবধান থাকবেন। এসব প্রোডাক্ট বা এদের থেকে সেবা নিলে আর্থিক ক্ষতিতো হবেই, শারীরিক ক্ষতিও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতারণা থেকে বাঁচতে পরামর্শ:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার সবগুলো অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড, অর্থাৎ আমার নামের পাশে নীল টিক চিহ্ন দেয়া আছে। নীল টিক চিহ্ন দেয়া নেই, এমন কোন পেজ বা প্রোফাইল থেকে আমার নাম বা ছবি ব্যবহার করে কিছু দাবি করলে সেটা ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।”
ডাক্তার তাসনিম জারা’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে শেয়ারকৃত পোস্টটি দেখে বুঝা যাচ্ছে যে ওজন কমানো বা মোটা হওয়ার ওষুধের বিজ্ঞাপনের সাথে তাঁর কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং উক্ত প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করলে আর্থিক ক্ষতি ও শারীরিক ক্ষতি – দুটোই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, যারা অনলাইনে তাঁর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে প্রোডাক্টগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করছে তারা প্রতারক এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এবার দেখা যাক ফেসবুকে প্রচারিত ওজন কমানোর জুসের বিজ্ঞাপনে কি বলা হচ্ছে। Organic Food নামক একটি ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচারিত এই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:
“ওজন কি বেড়েই চলেছে!!
অতিরিক্ত ওজন, মেদ-ভুড়ি কন্ট্রোল করতে পারছেন না! এই গরমে জুস খেতে খেতে কমিয়ে ফেলুন আপনার ওজন!! আপনার এই অতিরিক্ত ওজনই একদিন আপনার জন্য বয়ে আনবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, হৃদরোগ ইত্যাদি সমস্যা। এছাড়াও শরীরের ওজন যদি উচ্চতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়.
তখন মানুষের সুস্থতা বা সৌন্দর্য বলতে কিছুই থাকে না। মান-সিক, শারীরিকসহ নানা রোগের উৎপত্তি হয়।
তাই এবার আমরা নিয়ে এসেছি আপনার জন্য সম্পূর্ণ ২৬ টি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জুস। এটি বাংলাদেশ সাইন্সল্যাবের পরিক্ষিত এবং অনুমোদিত। কোন প্রকার সাইড এ-ফে-ক্ট এবং ডায়েট ছাড়াই এটি আপনার
ওজন কমাবে।।
তাই দেরি না করে এখনই Send Message অপশনে ক্লিক করে
বিস্তারিত জেনে নিন। অথবা কল করুন 01630344703 নম্বরে”
মূলত, সাতদিনে ওজন কমানোর কিংবা মোটা হওয়ার জুসের কার্যকারিতা নিয়ে ক্রেতাদের মনে যাতে কোন সন্দেহ সৃষ্টি না হয় সেজন্য এইসব ওষুধের বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়। ফলে, ক্রেতারা বিজ্ঞাপনে পরিচিত চিকিৎসকের মুখ দেখতে পেয়ে এই ভেবে আশ্বস্ত হন যে নিশ্চয়ই ঐ ওষুধের কোন সুফল আছে, নতুবা অমুক চিকিৎসক এটা ব্যবহার করতে বলতেন না! এভাবে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিংবা চিকিৎসকের রেফারেন্স ব্যবহার করে ওষুধ বিক্রয় প্রতারণার শামিল, যেখানে আসলেই সাতদিনে ওজন কমানোর জুসের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ আছে।
উল্লেখ্য, ডাক্তার তাসনিম জারা সহায়-হেলথ (Shohay Health) নামক একটি ডিজিটাল হেলথ কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস নামক একটি সরকারি হেলথ কেয়ার সিস্টেমে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের সিনিয়র ক্লিনিকাল সুপারভাইজর হিসেবে কাজ করছেন। ডাক্তার তাসনিম জারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রমাণ-ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট তৈরি করে শেয়ার করেন, যা তাঁকে একজন বিশ্বস্ত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি পেতে সাহায্য করেছে। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু অনলাইন-ভিত্তিক ব্যবসায়ীরা তাঁর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ওজন কমানোর কিংবা মোটা হওয়ার ওষুধ বিক্রি করার জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এইধরণের বিজ্ঞাপনগুলোকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।