সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে একটি উক্তি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, তিনি বলেছেন, “খালি মাঠে আর গোল দেওয়ার সুযোগ নেই। দেশের মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে”। তবে অনুসন্ধানে ড. ইউনুসের এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। তার ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ কিংবা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তার নামে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ভাইরাল এই বক্তব্য থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হলে, এ সংক্রান্ত বেশ কিছু ভিডিও এবং সংবাদ সামনে আসে। যেমন, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ প্রকাশিত মাছরাঙার এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভোটের মাঠে কাউকে খালি মাঠে গোল করতে দেয়া হবে না এমন বার্তাই দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এছাড়া আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বিভিন্ন সময়ে “খালি মাঠে গোল দেওয়া” সম্পর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। এর বাইরেও অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের বক্তব্যে এই বাক্যটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন।
এ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই বাক্যটি বহুল প্রচলিত একটি রাজনৈতিক প্রবচন। উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার মতবিনিময় সভায় দলের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার নির্দেশনা আসে বলে জানা যায়। মূলত এর পরপরই “খালি মাঠে গোল দেওয়া” সম্পর্কিত রাজনৈতিক এই প্রবাদটি পুনরায় আলোচনায় আসে। তারই প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে ড. ইউনূসের পরিচয়ে একই ধরণের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
ড. ইউনূসের নামে এমন বক্তব্যের সত্যতা অনুসন্ধান করা হলে, এর পক্ষে কোনো ধরণের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাঁর ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ কিংবা দেশীয় অথবা আন্তর্জাতিক মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও এই ধরণের কোনো মন্তব্যের প্রমাণ মেলেনি। এছাড়া যারা এই দাবিটি করছেন তাদের পক্ষ থেকেও কোনো ধরণের ছবি, ভিডিও কিংবা কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
পুনরায় অনুসন্ধানে, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টুল ক্রাউডট্যাংগেল এর মাধ্যমে গত ৬ জুন, ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। পুরনো এই পোস্টে ড. ইউনূসের নামে একই মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়, তবে সেখানে এর সাথে নিম্নোক্ত একটি ছবিও দেখতে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, ছবিটিরসূত্র খুঁজতে গিয়ে গত ৩ মার্চ, ২০২৩ এ প্রকাশিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের “ইউনূস সেন্টারের” একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আসামে অনুষ্ঠিত বোডোল্যান্ড নলেজ ফেস্টিভ্যালে প্রফেসর ইউনুস যোগদান করেন। একই সফরে তিনি রাঙ্গিয়া কলেজ এবং গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ছবিটি মূলত সেসময়কার। মূল ছবিতে লক্ষ্য করলে “ইউনিভার্সিটি অব গুয়াহাটি”র লোগোটিও দেখতে পাওয়া যায়।
স্বাভাবিকভাবেই উক্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ধরণের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সেরকমটা বলবারও কথা না। সেখানে প্রফেসর ইউনুস নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলেন। চাকরি নয় বরং উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উত্সাহিত করেন।
অর্থ্যাৎ, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে, পুরো ভিন্ন প্রসঙ্গের একটি ছবির সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি রাজনৈতিক বক্তব্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। পুরনো বানোয়াট এই মন্তব্যটিকেই সম্প্রতি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো সম্পর্ক নেই।
তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় উক্ত পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।