ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগকারী অধ্যাপক আবদুল বাছির হিন্দু নন

30
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগকারী অধ্যাপক আবদুল বাছির হিন্দু নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগকারী অধ্যাপক আবদুল বাছির হিন্দু নন

জহিরুল ইসলাম 

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে :ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হিন্দু অধ্যাপককে পদত্যাগে বাধ্য করেছে  জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন। প্রথমে হিন্দু অধ্যাপক কে কুরআনের আয়াত পাঠ করে শোনানো হয়েছে তারপর উনার পদত্যাগ নেওয়া হয়েছে।

যা পাওয়া যাচ্ছে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন (অনুষদের প্রধান) ড.আব্দুল বাছিরের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৯শে আগস্ট একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। এই শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিক্ষোভের মুখে ড.আব্দুল বাছির পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। এসময়ে শিক্ষার্থীদের কোরআন এর একটি অংশ তেলাওয়াত করতে এবং মোনাজাত করতে দেখা যায়।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে , এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

এসব ভিডিওতে একজন শিক্ষার্থীকে কোরআন শরীফের একটি ছোট সূরা (সূরা ত্বীন) পুরোটা পাঠ করতে শোনা যায়। এসময় কলা অনুষদের ডিন সহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা শান্তভাবে অবস্থান করছিল। কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন। সূরা শেষ হলে সমবেত শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে ভিডিও শেষ হয়।

অনুসন্ধান

ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিওতে মাছরাঙ্গা টিভির লোগো দেখা যাচ্ছে। এই সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেল,

মাছরাঙ্গা নিউজ নামক ভেরিফাইড পেজ থেকে ১৯শে আগস্ট বিকাল ৪ টা ২৭ মিনিটে ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল। এই ভিডিওর ক্যাপশন ছিল –

ইফতার মাহফিলে বাধা দেয়া কলা অনুষদের ডিনকে পদত্যাগে বাধ্য করে তার কামরাতেই কোরআন তেলাওয়াত মোনাজাত।

এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ ১৯শে আগস্ট এ সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছিল।

দৈনিক যুগান্তর এ ১৯শে আগস্ট তারিখে প্রকাশিত কুরআন তিলাওয়াতে বাধা দেওয়া সেই ঢাবি শিক্ষক পদত্যাগ করে ধরলেন মোনাজাত শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির ডিনের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের পর অধ্যাপক আব্দুল বাছিরকে নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত এবং হাত তুলে দোয়া করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ডিন কার্যালয়ে ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে অধ্যাপক আব্দুল বাছির মৌখিক পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কলা অনুষদের সামনে এবং ভিতরে পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তিনি পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঐতিহাসিক বটতলায় রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে গত ১০ মার্চ কুরআন তিলাওয়াত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। পরে আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের ‘কেন শাস্তি প্রদান করা হবে না’— এই মর্মে লিখিত বক্তব্য চান কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাসির। অনুষ্ঠান করার আগে কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি না হওয়া নেওয়ায় চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান তিনি। গত ১৩ মার্চ আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান জুবায়ের মুহাম্মদ এহসানুল হকের কাছে এই লিখিত বক্তব্য চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়।

একই রকম খবর অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। এমন কিছু খবর দেখতে পাবেন এখানে , এখানে । এই সকল সংবাদেই উক্ত ডিনের নাম ড. আব্দুল বাছির হিসেবেই প্রকাশিত হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে কলা অনুষদের ডিন হিসেবে ড. আব্দুল বাছিরকেই দেখা যাচ্ছে।

এই প্রতিবেদন লেখার সময়েও (২০শে আগস্ট দুপুর ১টা) তার নাম এবং ছবি এই ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছিল।

এছাড়া, উক্ত অধ্যাপক এর পদত্যাগ , এবং তাঁর অফিস কক্ষে কোরআন তেলাওয়াত এর বেশ কিছু ভিডিও ১৯শে আগস্ট তারিখেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ( যেমন – এখানে, এখানে) এসব পোস্টের কোথাও তাকে ‘হিন্দু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।

ড. আব্দুল বাছির এর ধর্মপরিচয়

আরবি নাম ‘আব্দুল বাছির’ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তিনি ধর্মে মুসলিম। আরবিতে ‘বাছির’ শব্দের অর্থ ‘অনুভবক্ষম’ বা ‘অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন’, যা আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। ফলে আব্দুল বাছির নামের অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহর বান্দা বা সেবক।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাচ্ছে, ড আব্দুল বাছির এর স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি এর বিষয় ছিল ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এছাড়া তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে বই এবং একাধিক গবেষণাপত্রও লিখেছেন।  তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে মুসলিম রাষ্ট্রচিন্তার রূপরেখা ( Outline of Muslim Political Thought) অন্যতম।

এ সকল আলামত থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ড.আব্দুল বাছির হিন্দু নন, বরং তিনি মুসলিম।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পরিচয়

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে,  জামাতে (জামায়াতে) ইসলামী এর ছাত্র সংগঠন এর সদস্যরা উক্ত অধ্যাপককে পদত্যাগ বাধ্য করেছে। তবে কোনো সংবাদমাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এছাড়া ,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও ১৯শে আগস্ট এর এই ঘটনা সম্পর্কে কোনো পোস্ট দেওয়া হয়নি।

অন্যান্য ফ্যাক্টচেকারদের অনুসন্ধান

ভারতভিত্তিক আজতক বাংলা (ইন্ডিয়া টুডে)তে ২১শে আগস্ট প্রকাশিত হিন্দু নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরান পড়ে পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যাপক একজন মুসলিম শীর্ষক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে ড. আব্দুল বাছির একজন মুসলিম।

সিদ্ধান্ত

সঙ্গত কারণে উক্ত পদত্যাগে বাধ্য হওয়া উক্ত অধ্যাপককে হিন্দু দাবি করা সকল ফেসবুক পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.