চলতি এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির একটু ভুয়া মন্তব্য অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে নেতিবাচকভাবে বলেছেন, এইচএসসি-২৩ ব্যাচ ১৭ তারিখ পরিক্ষা দিতে না চাইলে ২০২৪ ব্যাচ এর সাথে পরিক্ষা দিতে পারবে। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারীদের বর্তমান সময়ে আন্দোলন পরিত্যাগ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আহবান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট বছর কেউ অকৃতকার্য হলে, বা পরীক্ষা দিতে অক্ষম হলে পরবর্তী বছর পরবর্তী ব্যাচে পরীক্ষা দিতে পারে। তবে, শাব্দিকভাবে শিক্ষামন্ত্রী এই বাক্যটা চলমান আন্দোলন সম্পর্কে বলেননি।
এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চলতি আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির গত ৮ এবং ১১ই আগস্ট তারিখে পাবলিক ডোমেইনে বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
৮ই আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই
তিনি আরো জানান, ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীকে পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর সেদিনের প্রেস কনফারেন্সের ১১ মিনিটের একটি ফুটেজ ইউটিউবে RTV News এর একাউন্টে প্রকাশিত হয়েছিল। এই বক্তব্য থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বাক্যটি পাওয়া যায়নি।
৮ই আগস্ট গণমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে – দি দেইলি স্টার , দৈনিক ইত্তেফাক ।
১১ই আগস্ট শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুরের পুরানবাজার কলেজে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা চত্বর উদ্বোধন শেষে শিক্ষামন্ত্রী চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ‘দেশের ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে শুধু নির্ধারিত সময়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য। তাই যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’
পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যারা পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন, আপনারা সহপাঠীদের দিকে তাকিয়ে যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশ নিন।’
এই বক্তব্য সম্বলিত ডেইলি স্টারের বক্তব্য দেখতে পাবেন এখানে।
১১ই আগস্ট চাঁদপুরে ভিন্ন একটা অনুষ্ঠানেও শিক্ষামন্ত্রী এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কথা বলেন। ভয়েস অফ আমেরিকায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
বাংলাদেশের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তবে, দুর্যোগ কবলিত এলাকায় এর ব্যতিক্রম হতে পারে বলে তিনি জানান।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেলে চাঁদপুরের লেডি প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত ভবন উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন দীপু মনি।তিনি বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত আছে, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনো এলাকায় পরীক্ষা বন্ধ করতে হয়, স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। দেশের অন্যান্য জায়গায় যথারীতি পরীক্ষা চলবে।”
বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ডেঙ্গু প্রতি বছরই হয়, এ বছর হয়তো প্রকোপটা বেশি। ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য সারাদেশের এইচএসসি পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এবার প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী রয়েছে। তারা এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। বহু আগে ১৭ আগস্ট পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই পরীক্ষা পেছানোর সুযোগ নেই।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কে দীপু মনি বলেন, “কিছু পরীক্ষার্থী সব সময় পরীক্ষার আগে চিন্তা করে আরেকটু সময় পেলে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়া যাবে। সে জন্য সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া যায় না। এটা পাবলিক পরীক্ষা, সঠিক সময়ে নেয়া জরুরি।”
তিনি বলেন, “ কোভিডের কারণে অনেক সময় পিছিয়ে পরীক্ষা নিতে হচ্ছে এবং এ বছর আমরা চেষ্টা করছি পরীক্ষা এগিয়ে নিতে। আগামী বছর আমরা চেষ্টা করবো স্বাভাবিক সময়ে নিতে।”
দীপু মনি বলেন, “আমাদের পরীক্ষায় শতভাগ পাস করে না। যারা পাস করে না, তারা পরের বছর পরীক্ষা দেয়। যারা ভালো করে না, তারা মান উন্নয়নের জন্য পরের বছর পরীক্ষা দেয়। এই সুযোগগুলো সব সময় আছে। কাজেই পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের পরীক্ষার্থীরা যেন সবাই পড়ার মধ্যে মনোনিবেশ করে। তাদের জন্য শুভ কামনা রইলো।”
ঝরে পড়া সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যারা এসএসসি পরীক্ষা দেয়, তাদের মধ্যে বহু সংখ্যক কর্মজীবনে প্রবেশ করে। অনেকে বিদেশে চলে যায়। আবার কেউ আছে অন্যান্য শিক্ষা, অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষায় চলে যায়, তারা আর এইচএসসি দিতে আসে না। এসব বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ফেসবুকে আলোচিত কথাগুলো বলেননি, বরং তাদেরকে ইতিবাচকভাবে সম্বোধন করে আন্দোলন পরিত্যাগ করে পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছে।
যেসকল ফেসবুক ব্যবহারকারী এই দাবি করছেন, তারাও তাদের দাবির সপক্ষে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য সম্বলিত কোনো ভিডিও, অডিও বা খবরের লিংক দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
বাংলাদেশের উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট বছর কেউ অকৃতকার্য হলে, বা পরিক্ষায় বসতে অক্ষম হলে পরবর্তী বছর পরবর্তী ব্যাচে পরীক্ষা দিতে পারে। অর্থাৎ, ২০২৩ ব্যাচের কোনো পরিক্ষার্থী এবছর পরীক্ষা না দিলে তাকে ২০২৪ সালের ব্যাচের সাথে (বা তার পরের কোনো ব্যাচের সাথে) পরীক্ষা দিতে হবে। তবে, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে এই বাক্যটা বা এই ধরনের কোনো সমাধানের কথা পাওয়া যায় নি।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই খবরটিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।