মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জানিয়েছেন , অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাচ্ছে ড. ইউনূস এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই উদ্ধৃতি সম্বলিত দৈনিক প্রথম আলোর খবরের আদলে একটি স্ক্রিনশটও ছড়িয়ে পড়েছে । তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই স্ক্রিনশটটা আসল নয়, বরং এডিট করে এটা তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পাবলিক ডোমেইনে ডক্টর ইউনুসকে তত্ত্বাববধায়ক সরকারের দায়িত্ব দেওয়া বা এই ধরনের কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
এই স্ক্রিনশট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, এখানে দৈনিক প্রথম আলোর লোগো থাকলেও নির্দিষ্ট কোনো তারিখ কিংবা সময় নেই।
এছাড়া, প্রথম আলোয় ব্যবহৃত ‘ফন্ট’ এর সাথেও এই স্ক্রিনশটে ব্যবহৃত ফন্টের মিল নেই।
প্রথম আলোর ওয়েবসাইটেও এই ধরনের কোনো খবরের শিরোনাম ( অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাচ্ছে ড. ইউনুস : পিটার হাস) খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদুপরি প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ২৯শে আগস্ট বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে এক পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, প্রথম আলোর সংবাদের নামে ছড়ানো এই স্ক্রিনশটটি নকল।
লন্ডনভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম সুরমা নিউজ এ গত ২৩শে আগস্ট কে হচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান? শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ না করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র সুরমাকে জানিয়েছে যে, ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নাম প্রস্তাব করেছে। শেখ হাসিনা সেই সরকারে তাকে রাখার শর্তে রাজি হয়েছেন। তবে ড. ইউনুস সেই সরকারে হাসিনাকে রাখতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থার একটি সূত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সেই সূত্রকে সমর্থন করে সুরমাকে জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে আরও কয়েকটি নাম তারা বিবেচনা করছে।
তবে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, বা আমেরিকান দূতাবাস এর কোনো কর্মকর্তার পক্ষ থেকে প্রকাশ্য গণমাধ্যমে এমন কোনো বক্তৃতা বা বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো পর্যবেক্ষণ করলে এমনটাই দেখা যায়।
গত ১৪ই আগস্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন পিটার হাস। এসময়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের একটি নাতিদীর্ঘ বিবরণ পাওয়া যায় ভয়েস অফ আমেরিকা-বাংলার এই প্রতিবেদনে। এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অবস্থান নেই।
তিনি আরো বলেন, “মূলত রাজনৈতিক দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা কোন পথ বেছে নেবে। আমরা কেবল সহিংসতামুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন (নিশ্চিতে) নিয়ে উদ্বিগ্ন ও আগ্রহী”।
এর বাইরে, গত ১০ই আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে , ১৪ই আগস্ট জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে, এবং ২৫শে আগস্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান (অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার) মো. আসাদুজ্জামানের সাথে সাক্ষাৎসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেননি পিটার হাস।
অর্থাৎ, ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হচ্ছেন, পিটার হাসের বরাতে এমন দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে ।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।