ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর ভাইরাল ছবি ও ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড

16
ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর ভাইরাল ছবি ও ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড
ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর ভাইরাল ছবি ও ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড

সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে একজন নারীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, পোস্টগুলোতে থাকা ব্যক্তিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিকৃত ছবি ও ভিডিওগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি। 

ঢাবি শিক্ষিকার ছবি দাবিতে এআই ছবি প্রচার

ভাইরাল ছবিগুলোতে সমুদ্রপাড়ে বিকিনি পরা এক নারীকে দেখা যায়। দাবিকৃত পোস্টগুলোতে তিনটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ক্যাপশন থেকে জানা যায় এই নারীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেহরীন আমিন মোনামীর বলে দাবি করা হচ্ছে।

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ছবিগুলো প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে তাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহারের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া যায়। তিনটি ছবির নিচের ডান পাশে একটি সাদা তারকা-আকৃতির জলছাপ দেখা যায়, যা গুগলের জেমিনি এআই-এর প্রতীক। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির মাধ্যমে ‘Nano Banana’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল ব্যবহার করে এমন কাল্পনিক বা সম্পাদিত ছবি তৈরি করা সম্ভব।

ছবিগুলোর পটভূমি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তিনটিতেই সমুদ্রের ঢেউ একই স্থানে অবস্থান করছে, যা বাস্তব সম্মত নয়।

এছাড়া, প্রথম ও দ্বিতীয় ছবিতে থাকা নারীর হাতে একটি ঘড়ির মতো অলঙ্কার দেখা যায়। কিন্তু দ্বিতীয় ছবিতে তার দুই হাতে দুটি ভিন্ন অলঙ্কার রয়েছে, যা অসঙ্গতিপূর্ণ। তৃতীয় ছবিতে দুই হাত উপরে তোলা অবস্থায় কোমরের কাছে টুপি অস্বাভাবিকভাবে ঝুলে আছে। একই ছবিতে ডান পা বালিতে স্থির থাকলেও কিছু বালি কণা ভাসমান দেখা যায়।

ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর ভাইরাল ছবি ও ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড

প্রথম ছবির সঙ্গে শেহরীন আমিনের মুখের মিল থাকলেও, পরবর্তী দুটি ছবিতে তার চেহারায় পরিবর্তন দেখা যায়।

শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার নিজস্ব ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টেও এমন কোনো ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এআই-নির্মিত কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল Hive Moderation-এ ছবিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ছবিগুলো এআই দ্বারা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৭%।

ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর ভাইরাল ছবি ও ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড

এছাড়া জবিয়ান নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ২০২৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তার ছবিযুক্ত একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়, জকসুর আগে ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও সাইবার বুলিং বিষয়ে শেয়ার করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহরিন মোনামি। পোস্টের ছবিতে অধ্যাপক মোনামীর পরনে শাড়ির রং ও ছাপ দাবিকৃত ছবিতে থাকে পোশাকের সাথে মিলে যায়। 

এ থেকে ধারণা করা যায়, এই সাদা রং ও লাল ফুল ছাপের শাড়ির ছবিকে ব্যবহার করে এআই প্রযুক্তি দিয়ে বিকিনি পরা ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে। 

সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার (মোনামী) নামে প্রচারিত ছবিগুলো এআই দ্বারা তৈরি।

ছাত্রের সাথে শিক্ষিকার চুম্বনরত ভিডিওর দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার 

এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

দাবিকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামী দুইজন মঞ্চে পাশাপাশি বসে আছেন। তাদের পেছনে গোলাপি আলোযুক্ত পর্দা। মঞ্চের টেবিলের সামনে সাজানো ফুল ও পানির বোতল রয়েছে। তবে তাদের মুখভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গিতে অস্বাভাবিক বিকৃতি ও অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়, যা ডিপফেকের লক্ষণ।

অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ২০২৫ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাবিতে ‘ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে সাদিক কায়েম ও শেহরীন আমিন মোনামী একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দাবিকৃত ভিডিওটির সাথে এই মঞ্চ ও তাদের পোশাকের মিল পাওয়া যায়।

S M Forhad নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই দিন তাদের ছবি পোস্ট করেন। পরে ‘Discover বাংলা‘ নামের পেজ ২৯ অক্টোবর তাদের একই মঞ্চে আলোচনার ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটিতে তাদের পাশাপাশি বসে আলোচনা করতে দেখা যায়। 

অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে তাদের চুম্বনের দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। ডাকসু ও বারডেমের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মূলক কর্মসূচি নিয়ে কিছু ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

অর্থাৎ, ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাদিক কায়েমের সঙ্গে শেহরীন আমিন মোনামীর কথোপকথনের সময়ের কোনো একটি অংশ ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় দাবিকৃত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর ভাইরাল ছবি ও ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড

এআই দ্বারা তৈরি কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ।  ডিপফেক-ও-মিটার এর AVSRDD (2025)’ মডেলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।সুতরাং, এই ভিডিওটিও এআই দিয়ে তৈরি ও বিকৃত।

সব বিষয় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর নামে প্রচারিত ছবি ও ভিডিও গুলো এআই দ্বারা তৈরি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এগুলোকে ‘বিকৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

প্রতিবেদনটি লিখেছেন ফ্যাক্টওয়াচের শিক্ষানবিশ শিবলী সাদিক সিফাত

Claim:
সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে একজন নারীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, পোস্টগুলোতে থাকা ব্যক্তিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)।

Claimed By:
Facebook Users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh