সম্প্রতি “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক” পরিচয়ে একজন বাসচালকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং তাকে পা ধরে মাফ চাওয়ানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে। মূলত ভিডিওটি ২০১৭ সালের জুন মাসে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার একটি ঘটনার। বাসচালককে হেনস্থাকারী সেই ব্যক্তিটি ঢাবি শিক্ষক নন বলে সেইসময় নিশ্চিত করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। সঙ্গত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
৪৭ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হচ্ছে,
“এলাকার মাস্তান আমরা,,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্তান,,,,বুঝতে পারছোস,,,,, পিতা সমতুল্য একজন সাধারন মানুষের সাথে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লগো ধারী শিক্ষকের ব্যবহার,,,এরা নাকি আবার জাতির কারিগর,,,,
হোক প্রতিবাদ”
ভিডিওটিতে দেখা যায়, কালো পাঞ্জাবী পরিহিত এক ব্যক্তি নিজেকে ঢাবি শিক্ষক বলে পরিচয় দিচ্ছেন এবং একজন বাস চালকের কলার ধরে তাকে শাসাচ্ছেন। এক পর্যায়ে তিনি সেই বাস চালককে তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। ভিডিওতে দৃশ্যমান কালো রঙের গাড়িটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এবং লোগো যুক্ত একটি স্টিকারও দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওর ঘটনাটি ২০১৭ সালের জুন মাসে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার একটি ঘটনার। সেসময় ঘটনাটি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে নাম না জানা সেই হেনস্থাকারী ব্যক্তিটি ঢাবি শিক্ষক নন বলে সেইসময় নিশ্চিত করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
“অভিযুক্ত ব্যক্তি ঢাবির শিক্ষক নন” বলে সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারের ফটোকপি এবং ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করা ভুয়া স্টিকার অনেক অপরাধীরা ব্যবহার করে থাকে। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে।
এদিকে, বাসচালককে হেনস্থাকারী সেই ব্যক্তি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রিয়াদ তানসেন বলে ছড়িয়ে পড়েছিল ফেসবুকে। যদিও রিয়াদ তানসেন তার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঐ ভিডিওর ব্যক্তিটি তিনি নন বলে দাবি করেছিলেন।
এ বিষয়ে রিয়াদ তানসেন জাগো নিউজকে বলেন, কে বা কারা না জেনে আমার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ওই গাড়িচালককে লাঞ্ছনাকারী আমি ছিলাম না। আর আমার-তো প্রাইভেটকারই নেই। আমি মোটরসাইকেল ব্যবহার করি।
উক্ত ঘটনা নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য যে, ভিডিওর ১১ সেকেন্ডে নিজেকে “শিক্ষক” বলে পরিচয় দেবার সাথে গাড়ির ভিতরেও “শিক্ষক” বসে আছেন বলে দাবি করেন হেনস্থাকারী ব্যক্তি। তবে গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
যেহেতু (১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন যে, ভিডিওতে দৃশ্যমান ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন, এবং (২) এ বিষয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত একটি তদন্ত চলমান ছিল, সেই প্রেক্ষিতে এই ভিডিও পোস্টকারীর দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?