এবার ইসলাম গ্রহণ করলেন মুহাম্মদ (সা:) এর অবমাননাকর ছবি নির্মাতা আরনুডো ফাওয়ান্ডার-শিরোনামে একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি ৯ বছর আগের খবর। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এটা ঠিক, তবে তিনি কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতা নন কিংবা তার নাম আরনুডো ফাওয়ান্ডার নয়।
গুজবের উৎস
টেক ম্যাক্স এবং আলোরপথ নামক দু’টি অনলাইন পোর্টালে ডিসেম্বরে এই খবরটি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এ সকল নিউজ লিঙ্ক শেয়ারের মাধ্যমে ফেসবুকে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এমন কয়েকটি পোস্ট এর লিঙ্ক দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
এবারইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন মুসলমানদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) এর অবমাননা করে ছবি নির্মাতা হল্যান্ডের অধিবাসী আরনুডো ফাওয়ান্ডার । আরনুডো ফাওয়ান্ডার বলেছেন, ইসরাইল ও আমেরিকান লবি আমাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করে ফিল্ম নির্মাণের জন্য প্ররোচিত করেছিলো। আজ আমি সে কাজের জন্য খুবই লজ্জিত।
আরনুডো ফাওয়ান্ডার কুয়েতের ‘আর রায়’পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, আমি সেই অপরাধটি করার পর নিজের মধ্যেই ভুল বুঝতে পারি। তখন কিছুটা বিচলিত হয়ে যাই। ফলে এক পর্যায়ে আমার ইসলাম গ্রহণের সুযোগ হয়। তিনি আরও বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সংগঠন থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। এখন একটি ইসলামি সংগঠন করার কথা ভাবছি। আমি মনে করি, হল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় আইন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন করতে বাধা দেয় না। বরং পূর্ণ অনুমোদন দিয়ে থাকে।
তিনি জানিয়েছেন, আমি যখন ওই ফিল্ম তৈরি করি তখন আমার ধারণা ছিলো ইউরোপের জন্য ইসলাম হুমকিস্বরুপ এবং ইসলামের কারণে এখানে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমার এ ভুলও ভেঙ্গে যায়। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় আমি এমনটি মনে করতাম। এটা ছিলো আমার মুর্খতার ফল। তিনি আরো বলেন, ফিল্ম তৈরির মাধ্যমে আমরা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি তার জন্য লজ্জিত।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
১। আরনুডো ফাওয়ান্ডার নামক কোনো ডাচ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে খুজে পাওয়া যায়নি। তবে ভাইরাল খবরে বর্ণিত ঘটনা এবং ছবির সাথে মিল সম্পন্ন Arnoud Van Doorn নামে একজনকে পাওয়া গেল। বাংলা উইকিপিডিয়া অনুযায়ী যার নামের বাংলা বানান- আর্নোড ভ্যান দুর্ন।
২। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী , তিনি Dutch Freedom Party (PVV) এর সক্রিয় সদস্য এবং নেদারল্যান্ড এর সংসদ সদস্য ছিলেন ।
২০০৮ ডাচ ফ্রিডম পার্টির শীর্ষ নেতা Geert Wilders ‘ফিতনা’ নামের একটি ইসলামবিদ্বেষী চলচ্চিত্র প্রযোজনা (produce) করেন । এই সিনেমার পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন Scarlet Pimpernel . ছবিটি পরিবেশনা ও বিপনণে আর্নোড ভ্যান দুর্ন সহায়তা করেছিলেন।
কাজেই, তাকে ফিতনা ছবির ‘নির্মাতা’ দাবি করা সঠিক নয় ।
৩। ২০১২ কিংবা ২০১৩ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের সঠিক তারিখ জানা না গেলেও, ২৮শে ফেব্রুয়ারি,২০১৩ তারিখে তিনি তার টুইটার একাউন্টে আরবিতে কলেমা শাহাদাত লিখে টুইট করেন, যা মুসলিমদের কাছে একটি খুবই পবিত্র বাক্য এবং সাধারনত কোনো অমুসলিম এই কলেমা পাঠ করলেই তিনি মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন বলে ধরা হয়। আরবি এই কলেমা শাহাদাত এর বাংলা অর্থ হচ্ছে,’ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , আল্লাহ বাদে অন্য কোনো উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ (সা) তার প্রেরিত প্রতিনিধি।‘
সে হিসাবে, আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশের পত্রিকাতেও ২০১৩ সালে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন –আমার দেশ।
২০১৯ সালেও এই পুরনো খবরটি ভাইরাল হয়েছিল। বুম বাংলাদেশ তখন এই খবরটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে অভিহিত করেছিল।
এবার আবারো ২০১৩ সালের খবরটি সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ না করে ‘এবার ইসলাম গ্রহণ করলেন’ শিরোনামে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে । সেই সাথে নাম এবং পেশা নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে একই পোস্টে। সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এসব পোস্টকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?