"২০২৬ সালের ডিভি লটারি: দুঃসংবাদ, তালিকায় নেই বাংলাদেশ"- এই বক্তব্যের কিছু পোস্ট সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরেই শেষ হয়ে গেছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে দেখা যায়, ‘দৈনিক আজকের কণ্ঠ’র একটি প্রতিবেদন এবং এর সঙ্গে যুক্ত ফটোকার্ডে বলা হয়, ২০২৬ সালে ডিভি লটারি তালিকায় নেই বাংলাদেশ। মূলত এই প্রতিবেদন থেকেই ‘নতুন খবর’ হিসেবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে খবরটি। প্রতিবেদন এবং পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মন্তব্যকারিরা এটিকে ‘এ বছরেই প্রথম ঘটেছে’ ধরে নিয়ে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করছেন। ‘(# stepdownyunus)’, ‘লাল স্বাধীনতার সুফল’, ‘বিশ্ব নেতার অবদান’- এ ধরণের মন্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তারা ধরে নিয়েছেন, এবারই প্রথম ডিভি লটারি থেকে বাদ পড়েছে বাংলাদেশ।
আজকের কণ্ঠের ফটোকার্ড ছাড়াও বিডি টালি(Bdtelly)’র একটি ফটোকার্ড শেয়ার দিয়ে পোস্টের ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “উন্নত জীবনযাত্রা ও ভালো কর্মসংস্থানের আশায় বিদেশে স্থায়ী হতে ইচ্ছুক তরুণ-তরুণীদের জন্য একটি বড় দুঃসংবাদ দিয়েছে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বিশেষত আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার অন্যতম সুযোগ ‘ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি’র ২০২৬ সালের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।” এই পোস্টেও এই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এবারই প্রথম ডিভি লটারি প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়েছে বাংলাদেশ।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রথম আলো’র একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বরাতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে পাঁচ বছরে কোনো দেশ থেকে যদি ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, তাহলে সে দেশ আর ডিভি প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারে না।
অর্থাৎ, ২০০৭ থেকে ২০১২ বাংলাদেশ থেকে এই পাঁচ বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। সে কারণে বাংলাদেশ ডিভি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আর যোগ্য নয়।
বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর থেকে প্রায় প্রত্যেক বছর ডিভি লটারি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা যায়। কয়েক বছরের প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখুন, ২০১৬, ২০১৭ , ২০১৯। অর্থাৎ এই ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তালিকা নবায়ন- সংক্রান্ত কারণে প্রায় প্রত্যেক বছর আলোচনায় উঠে আসে এই বিশেষ ভিসা।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইট এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর থেকে প্রায় প্রত্যেক বছর ডিভি লটারি- সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করা হয়। সেই হালনাগাদের তালিকা ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ দেশের সংবাদমাধ্যম এবং এর ফলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। যেমন- ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ডিভি লটারি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে কোন কোন দেশ আবেদন করতে পারবে- এই তালিকা প্রকাশ করে, শেষে কারা আবেদন করতে পারবে না সেই তালিকায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছে। দুই বছরের প্রজ্ঞাপন দেখুন, ২০১৩২০২০।
কাজেই, সবদিক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জন্য ডিভি লটারি কার্যক্রম কখনো চালু হয়নি। ফলে সঙ্গত কারণে, ‘২০২৬ সালের ডিভি লটারি কার্যক্রমে বাংলাদেশ নেই’- এই তথ্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।
Claim: "২০২৬ সালের ডিভি লটারি: দুঃসংবাদ, তালিকায় নেই বাংলাদেশ"- এই বক্তব্যের কিছু পোস্ট সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh