সম্প্রতি ইরানের নারীদের হিজাব পরা নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, অবশেষে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করেছেন ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইব্রাহিম রাইসির দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগে থেকেই ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ছিল। ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৯৭৯ সালের ৭ই মার্চ এই সংক্রান্ত নির্দেশনামা জারি করেছিলেন। তবে, খোমেনি কিন্তু কখনও ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন না । অন্যদিকে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইব্রাহিম রাইসি কেবল ইরানের আইন অনুযায়ী হিজাব পরা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ হিজাব আইন ইরানের জন্য নতুন কিছু না। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইরানের হিজাব আইন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে প্রাসঙ্গিক কিছু কীওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী আইনগতভাবে নারীদের হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগেও ইরানের নারীরা ইসলামি রীতি অনুযায়ী পোশাক পরতেন তবে, এর পাশাপাশি তারা পশ্চিমা পোশাকও পরতেন। আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৯৭৯ সালের ৭ই মার্চ ইরানের সকল নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশনামা জারি করেন। এরপর ১৯৮১ সালে দেশটির সকল নারী ও কিশোরীদের ইসলামি রীতি অনুযায়ী পোশাক পরা আইনত বাধ্যতামূলক করা হয়। ইরানের নারীরা তখন থেকেই এই পোশাক সংক্রান্ত আইনের বিরোধিতা করে আসছে এবং নিয়ম ভঙ্গ করে আসছে।
নারীদের পোশাক সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করা প্রতিরোধ করতে ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে হিজাব আইনে কোনো পরিবর্তন না এনে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে দেখা যায়। গত ১ এপ্রিল ইরানে জনসম্মুখে চুল ঢেকে না রাখায় দুই নারীর মাথায় দই ছুঁড়ে মেরেছিল এক ব্যক্তি। এরপর ওই ব্যাক্তি এবং দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইরানের বিচার বিভাগ অনুযায়ী জনসম্মুখে ঠিকমত চুল না-ঢাকার জন্য ওই দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং জনপরিসরে গোলযোগ তৈরির জন্য ওই ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছিলেন যে, ইরানে জনসম্মুখে হিজাব না পরা ইরানের আইন অনুযায়ী অবৈধ।
নারীরা জনসম্মুখে ইরানের পোশাক সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী হিজাব পরছে কি না তার নজরদারি করার জন্য দেশটিতে নৈতিক পুলিশ নামে একটি বাহিনী সক্রিয় রাখা হয়েছে। এছাড়াও হিজাব লঙ্ঘনকারী নারীদের শনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইরানে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের নেতা হচ্ছেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। তিনি ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। তবে, তিনি কখনও ইরানের প্রেসডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি।
অতএব সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?