নামাজের সময় অন্ধ ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর

16
নামাজের সময় অন্ধ ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর নামাজের সময় অন্ধ ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর

Published on: [post_published]

সম্প্রতি মক্কায় তারাবির নামাজ পড়া অবস্থায় মিশরীয় এক অন্ধ লোক তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন — এমন শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি কমপক্ষে ২০১৬ সাল কিংবা তারও আগের। ভিডিওতে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার যে দাবিটি করা হচ্ছে, তা সঠিক কি না তা জানা যায়নি। তবে ভিডিওর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ভারতের ইন্ডিয়া ডটকমসহ  আরো কয়েকটি ওয়েবপোর্টাল। তাদের প্রতিবেদন থেকে ভিডিওটি সম্পর্কে কমপক্ষে দুইটি অসংগতি চিহ্নিত করা যায়। তাই ছয় বছর পুরানো এবং অসংগতিপূর্ণ এই ভিডিওটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওতে একজন লোককে কাঁদতে দেখা যায়। একটু পর পর পাশে থাকা মানুষদের জড়িয়ে ধরে তিনি কাঁদছেন। ভিডিওর ধারাবর্ণনায় বলা হয়, মিশরের একজন অন্ধ লোক মক্কা শরীফে তারাবির নামাজ পড়ার সময় হঠাৎ চোখের জ্যোতি ফিরে পান।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই ভিডিও থেকে নেয়া স্থিরচিত্রের মাধ্যমে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ০৮ জুন, ২০১৬ ইউটিউবে আপলোড করা একটি ভিডিও পাওয়া যায়। “Miracle of a blind man’s dua in Makkah | Ramadan 2016” শিরোনামে এই ভিডিওটি “Amir Uddin” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত হয়।

এই ইউটিউব ভিডিওতে থাকা ইংরেজি সাবটাইটেলে বলা হচ্ছে, ” ধন্যবাদ রব, আমি আবার দেখতে পাচ্ছি”। যা এই ভাইরাল দাবিটিকে সমর্থন করে।

ইউটিউবে পুনরায় অনুসন্ধান করা হলে, ৬ জুন ২০১৬ তারিখের আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির দাবিও একই। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালে  মক্কাতে প্রার্থনার সময় এই অন্ধ মানুষটির চোখের জ্যোতি ফিরে আসে।

এই ভিডিওগুলোর সাথে বর্তমানে ভাইরাল দাবির মিল থাকলেও, সন্দেহ প্রকাশ করছে কয়েকটি গণমাধ্যম। ঘটনার সত্যতা জানতে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করা হলে এমন কয়েকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

দ্য সৌদি এক্সপাট নামে একটি ওয়েবপোর্টালে “An Amazing story of a miraculous thief in the city of Makkah” শিরোনামে এই প্রতিবেদনে ভাইরাল এই ভিডিওটি নিয়ে একাধিক অসংগতি তুলে ধরা হয়।

সেখানে ভিডিওটি দেখতে পাওয়া না গেলেও এর বর্ণনার সাথে বর্তমান ভিডিওটি হুবহু মিলে যাচ্ছে। বিভিন্ন টুইটের সূত্র দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় যে,  মানুষটি যদি সত্যিই অন্ধ হতো তবে তার হাতে ঘড়ি কেনো থাকবে? পরবর্তীতে ফ্যাক্টওয়াচ এই ঘড়ির অসংগতিটির সত্যতা পায়। অন্ধ দাবি করা সেই মানুষটির হাতে ঘড়ি দেখতে পাওয়া যায়।

ভারতের ইন্ডিয়া ডটকমকে সূত্র ধরে প্রকাশিত হয় উপরোক্ত প্রতিবেদনটি। পরবর্তীতে ইন্ডিয়া ডটকমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ৯ জুন, ২০১৬ এ প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়।

সেখানে দ্বিতীয় অসংগতি হিসেবে হাফিংটন পোস্টের বরাতে আরেকটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। সেই অন্ধ ব্যক্তির ছেলে হিসেবে দাবি করা তামের সায়েদ একটি টুইটে জানান যে, তার বাবার এক চোখে রক্ত জমে গিয়ে (ব্লাড ক্লট) চোখের জ্যোতি চলে গিয়েছিলো এবং পরবর্তীতে মক্কায় এসে ঠিক হয়ে যায়। তবে তার বাবার সম্পূর্ণ অন্ধত্ব ছিলো না বলে দাবি করা হয় সেখানে। তবে এই বক্তব্যটি মূলত সেই অন্ধ ব্যক্তির ছেলের কি না তা নিয়ে কোনো মজবুত প্রমাণ দেখানো হয়নি বলেও দাবি করা হয়।

এছাড়া হাফিংটন পোস্টের মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 

সুতরাং, একটি বিষয় নিশ্চিত যে ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয়। কমপক্ষে ২০১৬ সালের ভিডিও এটি। এছাড়া শিরোনামের দাবির পিছনেও রয়েছে যথেষ্ট অসংগতি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই ভিডিওটির সাম্প্রতিক সার্কুলেশনকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.