যা দাবি করা হচ্ছেঃ ফিলিস্তিনের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে একটি র্যালির ভিডিও শেয়ার করেছেন ইলন মাস্ক।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। দৈনিক কালবেলার ফটোকার্ডযুক্ত ফেসবুকে শেয়ার হওয়া পোষ্টগুলোতে ফিলিস্তিনের পতাকাযুক্ত যেই র্যালির ভিডিওর কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইলন মাস্কের ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে তা শেয়ার করা হয়নি। মূলত ইলন মাস্কের নামে এক্স এর একটি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট থেকে “এটা স্টকহোম” শীর্ষক শিরোনামে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছিল। তাছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে ইলন মাস্ক ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়েছেন এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দৈনিক কালবেলার ফটোকার্ডযুক্ত ফেসবুকে শেয়ার হওয়া পোষ্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে যে, ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে একটি র্যালির ভিডিও শেয়ার করেছেন। কালবেলার ফেসবুক পেইজে গত ৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্টে এ সংক্রান্ত মূল ফটোকার্ডের কমেন্ট সেকশনে বিস্তারিত প্রতিবেদনের লিংক খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা ছিল যে, ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইলন মাস্কের শেয়ার করা ভিডিওর ক্যাপশন হচ্ছে “এটা স্টকহোম” (অনুদিত)।
মূল প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট
তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইলন মাস্কের ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্টে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। কিন্তু অনুসন্ধানে সেখানে এমন কোনো ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, Elon Musk (Parody) নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৭ নভেম্বর ভিডিওটি টুইট করা হয়।
প্যারোডি অ্যাকাউন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে এক্সে একটি জনপ্রিয় চর্চা। যে অ্যাকাউন্টগুলো কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থার নাম ব্যবহার করে আলোচনা, ব্যঙ্গ, বা সেই সত্তা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে সেগুলো প্যারোডি অ্যাকাউন্ট হিসাবে পরিচিত৷ এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা প্রায়ই বিভ্রান্তি এড়াতে ব্যবহারকারীর নাম বা বায়োতে “প্যারোডি” শব্দটি ব্যবহার করে। এক্সে ইলন মাস্কের নাম ব্যবহার করে অনুসন্ধান করলে তার নামে কমপক্ষে চারটি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। আদতে সেগুলো তার নিজস্ব ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট নয়। অর্থাৎ, প্যারোডি অ্যাকাউন্টে থাকা কোনো তথ্য, ছবি বা ভিডিওর দায় ইলন মাস্কের নয়।
ইলন মাস্কের নামে কিছু প্যারোডি অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট
অন্যদিকে, নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস থেকে ইলন মাস্ক ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনের মধ্যে সরাসরি কাউকে সমর্থন বা বিরোধিতা করেছেন কি না এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ইলন মাস্ক গত ২৮ অক্টোবর নিজের ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন “স্পেসএক্স গাজায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাহায্য সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগের লিঙ্কগুলিকে সাহায্য করবে” (অনুবাদ)। স্পেসএক্সের আওতাধীন স্টারলিঙ্ক হচ্ছে নিম্ন-কক্ষপথের উপগ্রহ ব্যবহারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন বা দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সরবরাহকারী একটি পরিসেবা। ইসরায়েলি বিমান হামলার তীব্র তরঙ্গ গাজার প্রায় সমস্ত ইন্টারনেট এবং সেলুলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। তাই গাজার আন্তর্জাতিক সাহায্য গোষ্ঠীগুলোকে স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট টার্মিনালের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করার পদক্ষেপ নিয়েছিল স্টারলিঙ্ক। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ স্টারলিঙ্কের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে।
ইলন মাস্ক যেহেতু ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সরাসরি কারও পক্ষেই সমর্থন জানাননি এবং ফিলিস্তিনের সমর্থনে এক্সে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো ভিডিও শেয়ার করেননি সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।