ইউফ্রেটিস নদী শুকিয়ে জেগে ওঠা রহস্যময় গুহা – তথ্য ও ছবির গোঁজামিল

42
ইউফ্রেটিস নদী শুকিয়ে জেগে ওঠা রহস্যময় গুহা – তথ্য ও ছবির গোঁজামিল
ইউফ্রেটিস নদী শুকিয়ে জেগে ওঠা রহস্যময় গুহা – তথ্য ও ছবির গোঁজামিল

Published on: [post_published]

“ইউফ্রেটিস নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে রহস্যময় গুহা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে” এমন তথ্য সংবলিত একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই তথ্যের সাথে ছবিটির কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও ইউফ্রেটিস নদী শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি সঠিক কিন্তু এর ফলে কোনো রহস্যময় গুহা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে কি না এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, যে ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, সেটি আফগানিস্তানে আল কায়েদা এবং তালেবান বাহিনীদের ব্যবহৃত একটি গুহার প্রবেশদ্বার। গুহাটি পরবর্তীতে ইউএস নৌ বাহিনী ধ্বংস করে দেয়৷ সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ছবি শেয়ারিং ওয়েবসাইট অ্যালামিতে একটি গুহার ছবি খুঁজে মেলে, যার সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, আফগানিস্তানের ঝাওয়ার কিলি এলাকায় ইউএস নেভির একটি অংশ সিল (SEALs – SEa, Air, Land) একটি সেনসিটিভ সাইট এক্সপ্লয়টেশন (এসএসই) মিশনের সময়, আল কায়েদা এবং তালেবান বাহিনীদের ব্যবহৃত ৭০ টি গুহার মধ্যে একটির প্রবেশদ্বার খুঁজে পায়। এটি মূলত তারই ছবি।

পরবর্তীতে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইউএস নেভির ওয়েবসাইটের সাহায্য নেয়া হয়। সেখানে ছবি এবং ভিডিও হোস্টিং সার্ভিস ফ্লিকারে ইউএস নেভির অফিসিয়াল একটি পেইজের লিংক খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও প্রাসঙ্গিক কিছু কী ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই সাইটেও ছবিটি সম্পর্কে একই তথ্য পাওয়া গেল। সঙ্গে আরও জানা গেল যে, ঝাওয়ার কিলি এলাকায় আবিষ্কৃত গুহা এবং মাটির উপরের  অন্যান্য কমপ্লেক্সগুলি ইউএস নেভির বিশেষ অপারেশন বাহিনী দ্বারা পরিচালিত বিমান হামলার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছিল। “অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডম” এর সমর্থনে আফগানিস্তানে মিশন পরিচালনা করেছিল নৌবাহিনীর বিশেষ অপারেশন বাহিনী।

এছাড়াও, ফ্লিকারে  এবং  ডিফেন্স মিডিয়া নেটওয়ার্কে ঝাওয়ার কিলি এলাকায় খুঁজে পাওয়া গুহাগুলোর ভেতরের কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে খাট, বিভিন্ন ধরণের বক্স, ওসামা বিন লাদেনের পোস্টার ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়। এর কিছু নমুনা নিচে দেখুন:

উল্লেখ্য, ইউফ্রেটিস নদীর পানি বেশ কিছু বছর ধরে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এর ফলে পানির নিচ থেকে কিছু প্রত্নতাত্বিক স্থাপনা জেগে উঠতে দেখা গেছে, যেমন প্রাচীন ভবনের ধ্বংসাবশেষ, প্রাক-খ্রিস্টান সমাধির একটি সিরিজ,  মোজাইক করা মেঝে, ইত্যাদি। কিন্তু ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটির মত কোনো গুহা খুঁজে পাওয়া গেছে— এমন কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কিন্তু, দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকে দেখানো গুহাটি ইউফ্রেটিস নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। গুহাটি যদি এতদিন পানির নিচেই থাকে, তাহলে এর ভিতরের জিনিসপত্র এতটা শুকনো আর অক্ষত থাকা সম্ভব নয়।

সঙ্গত কারণে এই ছবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা”হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh