কোভিড-১৯ টিকা: সত্য বনাম গালগল্প
Published on: [post_published]
এমআরএনএ টিকা কি আপনার ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারে?
উত্তর: না
ফাইজার এবং মডার্না এই দুটোই এমআরএনএ টিকা, যার মানে এগুলোতে সংকেত-বাহক রিবোনিউক্লিক এসিড থাকে। একবার এটি দেহে প্রবেশের পরে, দেহের কোষ এটি গ্রহণ করে ফেলে। কিন্তু এটি কখনই কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে না, যেখানে আপনার সমস্ত ডিএনএ থাকে। এমআরএনএ’তে আমাদের দেহের কোষের জন্য স্পাইক প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা থাকে সার্স-কোভ-২ জীবাণুটির পৃষ্ঠের মতন দেখতে যা কোভিড–১৯ এর জন্য দায়ী। যখন আপনার দেহের কোষগুলো তাদের পৃষ্ঠে এই স্পাইক প্রোটিনগুলো স্থাপন করে, তখন আপনার শরীর তাদের বহিরাগত হিসাবে চিহ্নিত করে এবং অ্যান্টিবডিসহ বিশেষ সেই রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
এমআরএনএ একটি অস্থায়ী বার্তা। স্পাইক প্রোটিনগুলো তৈরি হবার পর, আপনার শরীর এমআরএনএকে ধ্বংস করে দেয় যাতে এটি শরীরে আটকে বা জমে না থাকে। এটি কোন জেনেটিক কোডের সাথে মেশে না এবং আপনার ডিএনএ-তে প্রবেশ করে না। এই টিকাগুলো থেকে কোনো ব্যক্তির ডিএনএ’র কোনো ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।
টিকার সুরক্ষা কি রোগ প্রতিরোধ থেকে পাওয়া অ্যান্টিবডির চেয়ে শক্তিশালী?
উত্তর: হ্যা
প্রথমবার আপনার শরীর যখন স্পাইক প্রোটিনগুলো দেখে, তখন সে কিছু রোগ প্রতিরোধী কোষকে সক্রিয় করে তোলে যাতে সেই প্রোটিনগুলোকে অ্যান্টিবডি চিনতে পারে এবং তার বিরুদ্ধে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। জীবাণুটি দ্বারা প্রথম সংক্রমণ কিংবা টিকার প্রথম ডোজের ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়া একইরকম হতে পারে।
এমআরএনএ টিকার গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক ডোজ টিকা উপসর্গযুক্ত কোভিড–১৯ এর বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। আমরা জানি টিকার এক ডোজ নেবার পরে বা ভাইরাসে সংক্রমণের পর আপনি কিছু পরিমাণ সুরক্ষা পান, কিন্তু আমরা জানি না যে এই সুরক্ষা কতদিন স্থায়ী হয়। ইতিমধ্যে তিন থেকে ছয় মাস পরে পুনরায় সংক্রমণের কিছু রিপোর্ট পাওয়া গেছে, তাই শুধুমাত্র এক ডোজ টিকা নিলে সময়ের সাথে সাথে তার কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে।
যখন আপনি টিকার দ্বিতীয় ডোজ পান, তখন আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে আরও প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে আপনি ‘বি’ অ্যান্টিবডি-উত্পাদনকারী কোষগুলোকে শক্রিশালী করছেন, একইসাথে ‘টি’ মেমরি কোষগুলোকেও সক্রিয় করে তুলছেন। টিকার উভয় ডোজ দেবার অর্থ হল আপনার শরীরে এই স্পাইক প্রোটিনটিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে একাধিকবার পরিচয় করিয়ে দেয়া। যাতে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং একাধিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
যেহেতু টিকা দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহায়তাকারীর মতন কাজ করে, তাই যারা কোভিড-১৯ এ ইতিমধ্যে একবার আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদেরও টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
টিকা দ্রুত বাজারজাত করতে গিয়ে কি পরীক্ষার ধাপগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে?
উত্তর: না
আমরা দেখেছি, টিকার নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে বছরের পর বছর লেগে যায়। এসমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন পড়ে, অন্যদিকে এসব স্বেচ্ছাসেবীদের প্রাকৃতিকভাবে আক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্রুত এগিয়ে গেছে। এর কারণ, সরকার এবং অন্যান্য সংস্থার যথেষ্ঠ আর্থিক সহায়তা এবং করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হার। ফলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কোনো ধাপ এড়াতে হয় নি।
ফাইজারের ট্রায়ালে ৪০ হাজারেরও এরও বেশি লোক এবং মডার্নার ক্ষেত্রে ৩০ হাজারেরও এরও বেশি লোক নিবন্ধন করেছিল। এটি অনেক বড় সংখ্যা। তবে যদি জীবাণুটি কম ছড়াত, তবে সংখ্যাটা যথেষ্ট হতো না। কিন্তু যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে জীবাণুটি এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে, এটি আসলে টিকা-নেয়া এবং টিকা-না-নেয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য বুঝবার জন্য ভাল সংখ্যা ছিল।
এমআরএনএ প্রযুক্তি কোভিড–১৯ এর টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ সময় সাশ্রয় করেছে। জীবন্ত ভাইরাস নির্ভর টিকাগুলোর তুলনায় এমআরএনএ টিকা তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ। জীবাণুকে বেড়ে তোলা বেশ কঠিন। এমআরএনএ টিকাগুলো জীবন্ত ভাইরাস-নির্ভর টিকা নয়। তাই এটি সহজেই উত্পাদন করা সম্ভব হয়েছে।
টিকার কার্যকারিতা কি শুধুমাত্র উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগীর ভিত্তিতে হিসাব করা?
উত্তর: নিশ্চিত নয়
শুধুমাত্র উপসর্গযুক্ত রোগীর ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতার হার মিলেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ। কারণ ফাইজার এবং মডার্নার ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোর জন্য নিয়মিত কোভিড-১৯ পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল না। ৪০ শতাংশ উপসর্গবিহীন রোগীর ক্ষেত্রে এই টিকা কতটা ভালো সুরক্ষা দেয় সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ছিল না।
সীমিত তথ্য বলছে, টিকাগুলো কিছু উপসর্গবিহীন সংক্রমণ রোধ করতে পারে। মডার্নার গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীদের প্রতিটি ডোজ পাওয়ার ঠিক আগে পরীক্ষা করা হয়েছিল। টিকা নেয়া বনাম না-নেয়া গ্রুপের মধ্যে উপসর্গবিহীন সংক্রমণের পরিমাণ কম ছিল। কেননা, গবেষকরা কেবল সেইসব অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, যাদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দিয়েছিল এবং পরীক্ষার পরে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছিল। আমরা জানি উপসর্গযুক্ত রোগীর সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে টিকাটি কতটা কার্যকর, কিন্তু আমরা জানি না এটি উপসর্গবিহীন রোগীর ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব রাখে।
যুক্তিসঙ্গতভাবে বললে, মডার্নার টিকা রোগ প্রতিরোধ বা উপসর্গবিহীন রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারে। অন্যান্য বেশিরভাগ টিকা উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গবিহীন দুরকম সংক্রমণের ক্ষেত্রেই কাজ করে। কিন্তু কিন্তু এটা এখনো প্রমাণসাপেক্ষ নয়।
টিকা নেয়ার কারণে আপনি কি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন?
উত্তর: না
কিছু কিছু টিকা (যেমন হাম বা মুখে খাওয়ার পোলিও) মাঝে মাঝে এমনটা ঘটিয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ এর টিকা সেগুলোর মতন কিছু নয়। এমআরএনএ টিকাগুলোতে কেবল একটি বার্তা রয়েছে যা সংকেত আকারে স্পাইক প্রোটিনে থাকে। এটি একটি জীবন্ত ভাইরাস নয়, তাই এই টিকা থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন সুযোগ নেই।
কিছু লোক টিকা নেবার পরে জ্বর বা পেশী ব্যথার মতো উপসর্গ অনুভব করতে পারে। কিন্তু এগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়, সংক্রমণের জন্য নয়। এটি আসলে কোনো খারাপ বিষয় নয়। কারণ এর অর্থ হল, আপনার শরীর টিকার প্রতি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে, যা কাম্য।
যদি আমার অ্যালার্জি থাকে, আমি কি টিকা নিতে পারবো?
উত্তর: হ্যা, যদি মারাত্মক অ্যালার্জি অ্যানাফিলাক্সিস না থাকে।
আপনি বেশিরভাগ অ্যালার্জির সাথে নিরাপদে টিকা নিতে পারেন। যাদের খাবার, পোষা প্রাণী, পোকামাকড়ের কামড়, ক্ষীর, মুখে খাবার ঔষধ, পরিবেশগত বা এমনকি বংশগত অ্যালার্জি আছে তারা সবাই এই টিকা নিতে পারবে। অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর টিকার প্রতিক্রিয়ায় অ্যানাফিল্যাক্সিস (একটি মারাত্মক, সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া) হওয়ার ঝুঁকি কম। ফলে, টিকা নেওয়া উচিৎ।
যদি আপনার ইতিপূর্বে অন্য কোনো টিকার ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিসের ইতিহাস থাকে তবে আপনি কিছুটা ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। “আপনার জন্য, এটি প্রয়োজনীয় নয় যে টিকা এড়িয়ে যাওয়া, কিন্তু এই মুহূর্তে আপনি টিকা নেবার আগে দু’বার ভাবতে পারেন। যদি আপনি এটি নেন, আপনি পর্যবেক্ষণের জন্য কমপক্ষে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে পারেন যে আপনার দেহে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে কিনা।
যদি আপনার কোনো অ্যানাফিল্যাক্সিসের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার টিকা নেওয়া উচিত হবে না। যদি আপনি টিকার প্রথম ডোজের নেবার পর মারাত্মক এলার্জি প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলেও আপনি টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেবেন না।
এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকা নেবার পর লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে একশরও কম লোকের মারাত্মক এলার্জি প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ফলে মারাত্মক এলার্জি প্রতিক্রিয়া সামগ্রিকভাবে একটি বিরল ঘটনা।
গর্ভবতী কিংবা স্তন্যদানকারী মায়েরা কি টিকা নিতে পারবেন?
উত্তর: হ্যা, শারীরিক অবস্থা বিবেচনায়।
আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি, সোসাইটি অফ ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন এবং সিডিসি বলেছে, শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় যোগ্য হলে গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের টিকা দেওয়া উচিৎ।
এই টিকাটি ভ্রূণ বা স্তন্যপানকারী শিশুর ক্ষতি করবে এমনটা মনে করার কোন স্পষ্ট যুক্তিসংগত কারণ নেই। এটি একটি জীবন্ত ভাইরাস টিকা নয়, এবং এমআরএনএ বাহুতেই থাকবে যেখানে টিকাটি দেওয়া হয় এবং সেখানকার কোষগুলো সেটি গ্রহণ করে। এমআরএনএ তার কাজ করার পরে শরীর থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। ফলে এমআরএনএ বা স্পাইক প্রোটিন বেড়ে ওঠা ভ্রূণের কাছাকাছি যাবে না কিংবা তার ক্ষতি করবে না — এমন ধারণা বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রবল।
একটি যুক্তিসঙ্গত উদ্বেগ হতে পারে জ্বর কিংবা অন্য কোনো শারীরিক প্রতিক্রিয়া। আমরা জানি যে কিছু ক্ষেত্রে, যদি কোনো মহিলার প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় খুব উচ্চ জ্বর হয়, সেক্ষেত্রে নিউরাল টিউব ত্রুটির জন্য জ্বর নিয়ে ঐতিহাসিকভাবে কিছু উদ্বেগ আছে, কিন্তু স্পষ্ট প্রমাণ নেই। টিকা নেবার পরে যদি কোনও মহিলার জ্বর হয়, তবে তাকে টাইলেনল খাওয়া উচিৎ। এটি টিকা না নেবার কোনো কারণ হওয়া উচিৎ নয়, কারণ আপনি একবার চিন্তা করুন, যদি আপনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন, তবে আপনার দেহে জ্বরসহ অন্যান্য অনেক ধরণের ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বরং টিকা নিলে তা কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভয়ানক পরিণতি থেকে মহিলাদের সুরক্ষা দিতে পারে।
সম্প্রতি যেসব গর্ভবতী কিংবা মায়েরা টিকা নিয়েছেন, তারা প্লাসেন্টা বা বুকের দুধের মাধ্যমে তাদের শিশুর কাছে কিছু সুরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি পৌঁছে দিতে পারেন। এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য বুকের দুধ থেকে আইজিএ অ্যান্টিবডি বের করার জন্য গবেষণা চলছে।
টিকা নেবার পরেও কি আপনি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারেন?
উত্তর: হ্যা
এটি আরেকটি প্রশ্ন যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। আপনি টিকার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পেতে পারেন। কিন্তু এই টিকা উপসর্গবিহীন সংক্রমণ রোধ করতে নাও পারে এবং টিকা নেবার পরেও আপনি জীবাণুটি ছড়াতে পারেন।
তাই, প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত, সবাইকে উপসর্গবিহীন সংক্রমণ এবং সংক্রমণকে একটি সম্ভাবনা হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ। মানুষ টিকা নেবার পর মনে করতে পারে যে তারা নিরাপদ। কিন্তু বাস্তবে তারা জীবাণুটি দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে এবং এটি শ্বাসনালীতে বহন করতে পারে, যা বাতাসে ছড়াতে পারে । এবং যেহেতু তারা টিকা নেবার কারণে নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন, তারা অসতর্ক হতে পারেন এবং রোগটি ছড়িয়ে দিতে পারেন। এই কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সবাইকে, এমনকি যারা টিকা পেয়েছেন তাদেরকেও মাস্ক পরার, তাদের নিজের বাড়ির লোকজন থেকে ছয় ফুট দূরে থাকার এবং ঘন ঘন হাত ধোয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
লক্ষণজনিত রোগ প্রতিরোধে টিকার ক্ষমতা অসাধারণ। গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু প্রতিরোধে এটি অনেক কার্যকর। তবে এটি ষোল আনা নিখুঁত নয়। এমন অনেকেই আছেন যারা দুই ডোজ টিকা নেবার পরেও সংক্রমিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের দেহ রোগ প্রতিরোধে প্রতিক্রিয়া দেখায় নি নাকি অন্যকিছু — তা আমরা এখনও জানি না।
জীবাণুটি যদি রূপ বদলায়, তাহলে কি আমাদেরও নতুন টিকা লাগবে?
উত্তর: হ্যা
করোনাভাইরাসের জীবাণু যে খুব বেশি রূপ বদল করেছে তা নয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যে, ভারতে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় জীবাণুটির বিভিন্ন রূপ (ভ্যারিয়েন্ট) দেখা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, স্পাইক প্রোটিনের পরিবর্তনের পরিমাণ কি টিকা দ্বারা রোধ করা সম্ভব? অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন, এটা সম্ভব।
আমাদের প্রতি বছর একটি নতুন টিকা লাগবে কিনা তা নির্ভর করে আমরা কত দ্রুত মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি তার ওপর। মিউটেশনের (জীবাণুটির পরিবর্তন) সম্ভাবনা নির্ভর করে জীবাণুটি কতটা ছড়িয়ে পড়ছে তার উপর। যখন জীবাণুটির প্রচুর সংক্রমণ ঘটে, এটি মানুষের দেহে থাকতে নিজেকে সক্ষম করে তোলে। এভাবে এর প্রজননে যে সব দুর্বলতা আছে তা দূর করে কিছু পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়। এটা তাকে আবারো ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে।
কোভিড-১৯ টিকার রোগ প্রতিরোধ শক্তি কতদিন স্থায়ী হবে আমরা জানি না। আমাদের প্রতিবছর একটি ফ্লু টিকা দরকার হতে পারে। এটি শুধুমাত্র জীবাণুর দ্রুত পরিবর্তিত হওয়ার কারণে নয়। বরং এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে।
আশার খবর হলো, যে এমআরএনএ টিকাগুলো দ্বারা জীবাণুর নতুন একটি ভেরিয়েন্টকে টার্গেট করা তুলনামূলকভাবে সহজ। মডার্না ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য টিকায় একটি নতুন সংযোজন এনেছে, যা বুস্টার শট হিসাবে দেয়া হবে। এটি মাত্র দুই বা তিন মাসের মধ্যে করা যেতে পারে। তবে কতবার আমাদের এটি করতে হবে, তা সময়ই বলে দিবে।
কোভিড-১৯ টিকা: সত্য বনাম গালগল্প
মতামত: ব্রাইন বসলেট, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাষ্ট্র
লেখক: নিনা বাই
ভাষান্তর – আপন দাস
মূল লেখা – COVID-19 Vaccine Fact Vs. Fiction: An Expert Weighs in on Common Fears
প্রকাশকাল: ২৭ জানুয়ারি, ২০২১
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
|
No Factcheck schema data available.