স্কুল-কলেজের গেটে কিশোরদের জটলা করতে নিষেধ করেছে সেনাবাহিনী?

29
স্কুল-কলেজের গেটে কিশোরদের জটলা করতে নিষেধ করেছে সেনাবাহিনী?
স্কুল-কলেজের গেটে কিশোরদের জটলা করতে নিষেধ করেছে সেনাবাহিনী?

Published on: [post_published]

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাতে একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তারিখবিহীন এই বিজ্ঞপ্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার সামনে শিক্ষার্থীদের অহেতুক ঘোরাফেরা করতে নিরুত্‌সাহিত করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ পুলিশ এর পক্ষ থেকে অনুরূপ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হলেও, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।

 ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে

এই নোটিশে বলা হয়েছে, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার যাওয়ার সময়/ছুটির সময়ে স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসার আশেপাশে বা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া এবং রাস্তা ঘাটে অহেতুক ঘোরাফেরা করা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হচ্ছে। ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা বাংলাদেশ army আজ থেকে যদি স্কুল,কলেজ এবং মাদ্রাসার সামনে কোনো বখাটে ছেলে পাওয়া যায়,তাহলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদেশক্রমে জেনারেল এস, এম শফিউদ্দিন, সেনা প্রধান।”

নোটিশে অসঙ্গতি:

ছড়িয়ে পড়া এই নোটিশটায় নিম্নলিখিত অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে।

১। এই বিজ্ঞপ্তি/জরুরি নোটিশ এ কোনো তারিখ দেখা যাচ্ছে না।

২। দ্বিতীয় বাক্যে ‘মাদ্রাসার যাওয়ার সময়’ বাক্যাংশ কোনো অর্থ তৈরি করছেনা। একইবাক্যে দুই জায়গায় ‘সময়’ এবং ‘সময়ে’ ভিন্নভাবে লেখা হয়েছে।

৩। সম্পূর্ণ বাংলা নোটিশে চতুর্থ লাইনে army কথাটা ইংরেজিতে লেখা হয়েছে।

৪। স্কুল,কলে ইত্যাদি শব্দের উপরে নীল ছোপ দেখা যাচ্ছে।

৫। সম্পূর্ণ নোটিশে ক্রিয়াপদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধুরীতি ও চলিতরীতির মিশ্র দেখা যাচ্ছে (যেমন-জানানো যাচ্ছে, নেওয়া হইবে)

৬। নোটিশের শেষে, আদেশক্রমে সেনাবাহিনী প্রধানের নাম লেখা রয়েছে,কিন্তু তাঁর কোনো স্বাক্ষর যুক্ত করা হয়নি।

৭। সেনাবাহিনী প্রধানের নাম হিসেবে ‘জেনারেল এস,এম, শফিউদ্দিন’ লেখা হয়েছে। কিন্তু আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পুরনো ভুক্তি থেকে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এবং এই বানানের মধ্যে কোনো কমা ব্যবহার করা হয়না।

সেনাবাহিনী কি এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে?

ফেসবুকে Bangladesh Army নামক একটি ভেরিফাইড পেজ আছে। এই পেজে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীতে ভির্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। এর বাইরে অন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ এই পেজ থেকে দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট, এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর এর ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, নিকট অতীতে এমন ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি।

২০১৮ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ,ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব একাউন্ট এর লিংক দিয়ে জানানো হয়েছিল , এগুলো ব্যতিত অন্যান্য সকল ভুয়া (Fake) ওয়েবসাইট/ ফেসবুক পেইজ/ ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ও প্রপাগান্ডার ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।

একই সাথে সর্বসাধারণকে সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভুয়া তথ্য সম্ভলিত পোষ্ট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার জন্যও অনুরোধ করা হলো ।

একই ধাঁচে পুলিশের পুরনো নোটিশ

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে জারি করা কমপক্ষে ২ টা বিজ্ঞপ্তির সাথে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর নামে ছড়িয়ে পড়া নোটিশটির মিল পাওয়া যাচ্ছে।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া ও রাস্তাঘাটে অহেতুক ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুলিশ প্রশাসন এর পক্ষে থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি প্রিন্টেড পোস্টার টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই পোস্টারে বলা হয়েছিল , স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া ও রাস্তাঘাটে অহেতুক ঘোরাফেরা করা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আজ থেকে যদি স্কুল ও মাদ্রাসার সামনে বখাটে ছেলে পাওয়া যায়, তাদের গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোটিশের শেষে – সৌজন্যে ,অফিসার ইনচার্, দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানা , এবং ফোন নাম্বার লেখা রয়েছে। এই নোটিশ সংক্রান্ত একটি সংবাদ দেখতে পাবেন এখানে


একই বার্তাসহ আরেকটি নোটিশ দেখা যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে, ২০২২ এর জুনে। তবে এই নোটিশে কোনো নির্দিষ্ট থানার নাম না দিয়ে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ কথাটি দেখা যায়।


কাছাকাছি সময়েই, ফেসবুকে এই নোটিশের একটি ভার্সন পাওয়া যায় , দেখুন এখানে

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এই নোটিশে নির্দিষ্ট কোনো জেলা, থানা বা তারিখ উল্লেখ না থাকায় সেটি বিভিন্ন বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল। বুম বিডি এর এই ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, অনেকে দেশের সকল স্কুলের জন্যই এই নোটিশ প্রযোজ্য বলে দাবি করছিলেন, যেটি আদৌ সত্য নয়।

পুলিশের পুরনো এই নোটিশের কথাগুলোই আংশিক পরিবর্তন করে , ‘পুলিশ’ শব্দটির পরিবর্তে সেনাবাহিনী বা আর্মি কথাটি যুক্ত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

Left: বাংলাদেশ পুলিশ এর আসল বিজ্ঞপ্তি; Right: সেনাবাহিনীর নামে ছড়ানো ভুয়া বিজ্ঞপ্তি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবৃতি:

১লা জুন বিকাল ৩.৪৯ মিনিটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্টে জানানো হয়েছে, ছড়িয়ে পড়া বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।

এইফেসবুক পোস্টে বলা হয়, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এর পক্ষ হতে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সংক্রান্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জরুরি নোটিশ নামক যে ফেসবুক পোস্টটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে/হচ্ছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অলীক। এ ব্যাপারে সর্বসাধারণকে সচেতন থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।”

সিদ্ধান্ত:

যেহেতু স্কুল-কলেজ সম্পর্কিত সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিটি সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল কোনো চ্যানেল থেকে আসেনি, এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এটাকে ‘ফেক পোস্ট’ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাই, সেনাবাহিনীর নাম ও লোগো ব্যবহার করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এসব বিজ্ঞপ্তিকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.