সম্প্রতি ফেসবুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দাবিতে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নাম ও লোগো সংবলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হচ্ছে। ফটোকার্ডটিতে ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে লেখা, ‘আমরা তো কখনো বলিনি ভারত আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোন কাজ করেছে। এটা সত্যি, আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা স্বাভাবিক। নরেন্দ্র মোদি, তিনি তো আমার ভাইয়ের মতো। তার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক আমার।' আবার দৈনিক কালের কণ্ঠের নাম ও লোগো সংবলিত আরেকটি ফটোকার্ডে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের চুম্বন নিয়ে একটি বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে লেখা, 'চুমু খাওয়া দোষের কিছু না চুমু খেলে মন ভালো থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।' ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দৈনিক আমার দেশ ও কালের কণ্ঠের কথিত এই ফটোকার্ড দুটিই বানোয়াট। সংবাদমাধ্যম দুটির নাম ও লোগো ব্যবহার করে ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে আমার দেশ পত্রিকার নাম ও লোগো সংবলিত ভুয়া কার্ড
নরেন্দ্র মোদী ও ভারত প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দাবিতে আমার দেশ পত্রিকার নাম ও লোগো সংবলিত ফটোকার্ডটি যাচাই করে দেখা যায়, কার্ডটিতে কোনো তারিখের উল্লেখ নেই। আমার দেশ পত্রিকার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে সাম্প্রতিক সময়ে কথিত বক্তব্যটি নিয়ে কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি।
পত্রিকাটির প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলোতে সাধারণত তারিখ উল্লেখ করতে দেখা যায়।
পাশাপাশি পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে সম্প্রতি প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলোর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী ও ভারত প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত কথিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের পার্থক্য নজরে পড়ে।
আমার দেশের কথিত ফটোকার্ড (বামে), পত্রিকাটির প্রচলিত ফটোকার্ড (ডানে)
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চেও নরেন্দ্র মোদী ও ভারত প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কথিত বক্তব্যটিরও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থাইল্যান্ডে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক একটি বৈঠকে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকটি নিয়ে একইদিনে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়। এই পোস্টেও কথিত বক্তব্যটির সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ নরেন্দ্র মোদী ও ভারত প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দাবিতে আমার দেশ পত্রিকার নাম ও লোগো সংবলিত ফটোকার্ডটিকে বানোয়াট হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
জামায়াতের আমিরের চুম্বন নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের নাম ও লোগো সংবলিত ভুয়া ফটোকার্ড
চুম্বন নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের নাম ও লোগো সংবলিত জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের কথিত বক্তব্য সংবলিত ফটোকার্ডটি যাচাই করে দেখা যায়, এতে তারিখ লেখা ১ এপ্রিল। এই তারিখ সূত্রে কালের কণ্ঠের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ খুঁজে এমন কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি।
একই দিনে ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য নিয়ে পত্রিকাটির ভিন্ন আরেকটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। এ ফটোকার্ডের সঙ্গে চুম্বন নিয়ে ডা. শফিকুর রহমানের কথিত বক্তব্য সংবলিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল রয়েছে। তবে এখানে থাকা বক্তব্যটি ভিন্ন। এই ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে ১২ বছর। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয়নি, সাক্ষ্যও দেয়নি।’
এ ছাড়া প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চেও চুম্বন নিয়ে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের কথিত বক্তব্যটির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এ থেকে স্পষ্ট যে, জামায়াতের আমিরের চুম্বন নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের নাম ও লোগো সংবলিত ফটোকার্ডটি সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি। মূল ফটোকার্ডে ডা. শফিকুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স নিয়ে কথা বলেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বেও জামায়াতের আমিরের চুম্বন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া ভিডিও শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ। প্রতিবেদনটি পড়ুন-
সর্বোপরি, ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল ফটোকার্ড দুটিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
Claim: সম্প্রতি ফেসবুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দাবিতে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নাম ও লোগো সংবলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হচ্ছে। ফটোকার্ডটিতে ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে লেখা, ‘আমরা তো কখনো বলিনি ভারত আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোন কাজ করেছে। এটা সত্যি, আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা স্বাভাবিক। নরেন্দ্র মোদি, তিনি তো আমার ভাইয়ের মতো। তার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক আমার।' আবার দৈনিক কালের কণ্ঠের নাম ও লোগো সংবলিত আরেকটি ফটোকার্ডে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের চুম্বন নিয়ে একটি বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে লেখা, 'চুমু খাওয়া দোষের কিছু না চুমু খেলে মন ভালো থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।'
Claimed By: Facebook users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh