সচিবালয়ে ৪০০ জন হিন্দু ‘সচিব’ রয়েছেন , এবং ‘মাদ্রাসা’ এর ‘উপসচিব’ একজন হিন্দু কর্মকর্তা – এমন দাবিযুক্ত একটা পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে ৮৭ জন সচিব ও সচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পাওয়া যাচ্ছে, যে নাম দেখে বোঝা যায় যে এখানে মাত্র ৪ জন হিন্দু কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া ‘কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ’ এর কর্মকর্তাদের নামের তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, এখানে উপসচিব পদমর্যাদার ১১ জন কর্মকর্তা থাকলেও তারা সবাই মুসলমান । সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
সচিব বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। বাংলাদেশের সচিবালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বনিম্নে আছেন সহকারী সচিব এবং সবার উপরে মন্ত্রী। এটি মূলত স্তরভিত্তিক নীতির উপর ব্রিটিশ কাঠামোর অনুকরণে গড়ে উঠেছে। পদের ক্রমটা হল -সিনিয়র সচিব>> সচিব>> অতিরিক্ত সচিব >> যুগ্ম সচিব >> উপসচিব >> সিনিয়র সহকারী সচিব >> সহকারী সচিব।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে সরকারের সচিব/সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দের একটি তালিকা পাওয়া যাচ্ছে। এই তালিকায় দাবি করা হচ্ছে, এটি ১৩.০২.২০২৪ তারিখ পর্যন্ত হালনাগাদ করা। এখানে ৮৭ জন সচিব বা সমমর্যাদাসম্পন্ন বা তদূর্দ্ধ পদমর্যাদার ৮৭ জন কর্মকর্তার তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় কারো ধর্ম উলেখ করা হয়নি, তবে নাম থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, এখানে ৪ জন কর্মকর্তা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এরা হলেন, জনাব তপন কান্তি ঘোষ (সিনিয়র সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়), জনাব সত্যজিত কর্মকার (সিনিয়র সচিব, বিভাগ), জনাব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী (চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন), জনাব সুকেশ কুমার সরকার (মহাপরিচালক, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি) ।
ছড়িয়ে পড়া পোস্টে ‘মাদ্রাসার উপসচিব’ হিসেবে একজন হিন্দু কর্মকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ নাম উল্লেখ না করে কেবলমাত্র ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মাদ্রাসা সম্পর্কিত সরকারি ২ টি অধিদপ্তর রয়েছে। এগুলো হল- মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এর কর্মকর্তাদের নামের তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, এখানে উপ-সচিব পদমর্যাদার কেউ নেই।
অন্যদিকে, কারীগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এর ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাচ্ছে, এখানে উপ-সচিব পর্যায়ের ১১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন । কর্মকর্তাদের তালিকায় যদিও তাদের ধর্ম উল্লেখ করা হয়নি, তবে নাম দেখে ধারণা করা যাচ্ছে যে তারা সবাই মুসলমান ।
অর্থাৎ, এখানে যে ২ টি দাবি করা হয়েছে, সেই ২ টি ই ভুল প্রমাণিত হল। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবি সম্বলিত পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।