পাকস্থলিতে দুটি টিউমার সহ ৭ মাস বয়সী একটা শিশুর আর্থিক সহায়তা চেয়ে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। এসব ছবিতে শিশুটির দূরবস্থার কথা বর্ণনা করে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এখানে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ভারতের একটি অসুস্থ শিশুর ছবি। তাছাড়া, আবেদনকারীর সাথে ফোনে তার দাবির সত্যতা যাচাই করতে গেলেও তিনি অসহযোগিতা করেন এবং সন্দেহজনক আচরণ করেন। এ সবকিছুর ভিত্তিতে ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : অসূস্থ এবং শারীরিকভাবে একটু অস্বাভাবিক একজন বাচ্চার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এই নিবন্ধে। এসব বিষয়ে সংবেদনশীল পাঠকদের এই নিবন্ধটি এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিভ্রান্তিরউৎস
৪ঠা আগস্ট বিকাল ৪ টা ৪৫ মিনিট থেকে এই পোস্ট টি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা হতে থাকে। এই কাজে কল্পনা জলপরী এবং Taronno Rahman নামের দুটি আইডি ব্যবহার করতে দেখা যায়। মানবিক সাহায্যের আবেদন সম্বলিত এই পোস্ট টি বিভিন্ন গ্রুপে আপলোড করার পরে হাজার হাজার বার শেয়ার করতে দেখা গেছে সাধারন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ঘুরে ফিরে ৪ টি ছবিই সব জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ছবিতে কেবলমাত্র অসূস্থ শিশু এবং তার নিকটাত্মীয়দের দেখা যাচ্ছে। কোনো মেডিকেল প্রেসক্রিপশন, কিংবা হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্র কিংবা ডায়াগনোস্টিক রিপোর্ট এসব ছবির সাথে আপলোড করা হয়নি।
ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা গেল, এসব ছবি গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ভারতের Ketto নামের একটি ফান্ড রেইজিং অর্গানাইজেশনের টুইটার একাউন্ট এবং ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়েছিল।
১০ই ফেব্রুয়ারি আপলোড করা এই ছবিগুলোতেই বাচ্চাটাকে ৬ মাস বয়সী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৬ মাস পরে,আগস্ট মাসে এসে বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে ভাইরাল হওয়া একই ছবিতেও বাচ্চাটাকে ৭ মাস বয়সী বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া পোস্টে সাহায্যের জন্য শিশুটির পিতা মোঃ সোহানুর রহমান এর একটি মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে। ফ্যাক্ট ওয়াচের পক্ষ থেকে এই নাম্বারে (০১৭৩-২১৯৮৯৪৭) ফোন করে বাচ্চাটার অসূস্থতার সত্যতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অপর প্রান্ত থেকে এই নাম্বার ব্লক করে দেওয়া হয়। একাধিক ফোন নাম্বার থেকে চেষ্টা করা হলে একই ঘটনা ঘটে।
ফোনে যতটুকু কথা হয়েছিল, সেই সময়ে উনি নিজেকে বাচ্চাটার বাবা , সোহানুর রহমান হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘True Caller’ এ্যাপে এই নাম্বারটা জনৈক ‘Medul এর নামে সংরক্ষিত দেখা যাচ্ছে।
যে দু’টি একাউন্ট ব্যবহার করে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে এই ছবিগুলো পোস্ট করা হয়েছে, সেই একাউন্টগুলোও ‘ফেক আইডি’ বলে মনে হচ্ছে। কোনো একাউন্টেও এদের কর্মস্থল কিংবা যোগাযোগের ঠিকানা নেই, একক কিংবা অন্য কারো সাথে কোনো ছবিও নেই।
কল্পনা জলপরীর যে ছবিটি প্রফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই ছবিটা গত কয়েক বছরে অনেকেই ব্যবহার করেছেন দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে , Taronno Rahman এর ফেসবুক প্রোফাইল লকড দেখা যাচ্ছে।
মানবিক সাহায্যের নামে প্রতারণা
বাংলাদেশে মানবিক সাহায্য চেয়ে প্রতারণা একেবারে নতুন ঘটনা নয়। মাঝে মাঝেই এমন ঘটনা শোনা যায়। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এসব প্রতারকদের গ্রেফতার এর খবর ও দেখা যায়।
গত ১০ই জুলাই ২০২১ তারিখে সিলেট থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এমন দু’জন অপরাধীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার তখন সাংবাদিকদের জানান, গ্রেপ্তার দুজন দীর্ঘদিন থেকে সংগৃহীত অসুস্থ শিশুদের ছবি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করে তাদের চিকিৎসার জন্য মানবিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছিল। অসুস্থ শিশুসহ বিভিন্ন মানুষের ছবি ব্যবহার করে তারা সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে প্রচার করত এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতো।
এছাড়া , গত ১২ই জুন ,ফিলিস্তিনের অসহায় এবং অসূস্থ মানুষদেরকে সাহায্যের জন্য নিজের পার্সনাল বিকাশ একাউন্টে বিপুল পরিমান অর্থ সংগ্রহ করা এবং সেগুলো নিজেই আত্মসাত করার অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশ আরেক তরুণকে গ্রেফতার করেছিল।
গুগল সার্চ এ এমন অনেক প্রতারকের সন্ধান পাওয়া গেল, যারা ভুয়া কারন দেখিয়ে মানবিক সাহায্যের কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করত। (এমন কিছু খবর দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে)
আলোচ্য ভাইরাল পোস্টটিতেও যথাযথ তথ্যপ্রমাণ না থাকায়, যাচাইয়ের জন্য যোগাযোগ করার পর ফোন নম্বর ব্লক করে দেয়ায় এবং ভারতীয় পুরনো একটি ছবিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশী শিশু দাবি করে মানবিক সাহায্যের আবেদন করায় ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?