বাম হাতে বেশ বড়সড় টিউমারসহ এক অসূস্থ তরুণের ছবি দেখিয়ে চিকিৎসা সহায়তা চাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপ থেকে। দাবি করা হচ্ছে, এটি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাধীন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের মোঃ মোতালেব হোসেনের ছেলে আরাফাত হোসেন এর ছবি। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি প্রকৃতপক্ষে ভারতের আসামের ইব্রাহিম আলি’র ছবি।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: এই নিবন্ধে এক অসূস্থ তরুণের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিষয়ে সংবেদনশীল পাঠকদের এই নিবন্ধটি এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এখানে দাবি করা হয়েছিল, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাধীন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের মোঃ মোতালেব হোসেনের ছেলে আরাফাত হোসেন, মারাত্মক ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। প্রায় এক বছর যাবৎ মোতালেব হোসেন ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে নিজের সহায় সম্বল যা কিছু ছিল তার সবই শেষ করে ফেলেছে। ঢাকা জাতিয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিমত দেন নিয়মিত চিকিৎসায় আরাফাত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আরাফাতের চিকিৎসার জন্য তার অসহায় বাবা সমাজের সকল হৃদয়বান দানশীল ও বিত্তবান ব্যক্তিদের আন্তরিক সাহায্য কামনা করেছেন।
এরপরে একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়।
৫ই জুলাই এই ছবি এবং পোস্ট প্রথম দেখা গেলেও পরবর্তী ৩ মাসে অর্থাৎ জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসের বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে এই ছবি এবং সাহায্যের আবেদন দেখা গিয়েছে বারবার। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে, এখানে, এখানে , এখানে, এখানে, এখানে , এখানে , এখানে , এখানে, এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
সাহায্যের আবেদনে বিকাশ নাম্বার হিসেবে একেক জায়গায় একেক নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। 01884049843, 01732198947, 01968601782, 01643693389, 01743965806, 01798004818 – এই ৬ টি নাম্বার ঘুরে ফিরে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় । প্রতিক্ষেত্রেই এই নাম্বারটিকে আরাফাতের বাবা মোতালেব হোসেন এর নাম্বার বলে দাবি করা হয়েছে।
মূল ছবি আসাম এর ইব্রাহিম আলি’র
ভাইরাল ছবিটি গুগল ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেল, ২০২১ সালের ২৯শে জুন তারিখে Dhubri Public Media নামের ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত হয়। অসমীয়া ভাষায় লেখা এই পোস্টে বলা হয়, ছেলেটি ক্যান্সারে আক্রান্ত, এখন গুয়াহাটি মিডল্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি । তার বাবা একজন শ্রমিক, তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ছয় সাত লক্ষ টাকার আর্থিক প্রয়োজনে খুবই দুর্বল । যা তার পরিবার বা তার বাবার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে । অতএব এই দুর্গতদের আর্থিক সাহায্য করার অনুরোধ রইল ।
এখানে, ছেলেটির নাম ইব্রাহিম আলি এবং বাবার নাম আব্দুর রহিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তারা ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার সুন্দরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বলেও জানা যায় ।
মোবাইল নাম্বার নিয়ে প্রতারণা
ফ্যাক্টওয়াচ এর আগেও বিভিন্ন মানবিক সাহায্যের ভুয়া আবেদন সনাক্ত করেছে। যেমন দেখুন –এখানে, এখানে, এখানে।
পূর্বের ভূয়া আবেদনে যেসব মোবাইল নাম্বার এবং বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোও আলোচ্য মোঃ আরাফাত এর সাহায্যের বিকাশ নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে । 01884049843, 01732198947, 01968601782, 01643693389, 01743965806, 01798004818 এই ৬ টি নাম্বার থেকে আরাফাতের জন্য সাহায্য চাওয়া হচ্ছে।
এদের মধ্যে 01732198947 নাম্বারটি পূর্বেও ব্যবহার করা হয়েছিল ফরিদপুরের শিশু সিয়ান এর ভুয়া সাহায্যের জন্য। তখন এই নাম্বারটিকে সিয়ান এর বাবা সোহানুর রহমান এর পার্সোনাল বিকাশ নাম্বার বলে দাবি করা হয়েছিল।
01968601782 নাম্বারটি আগেও ব্যবহার করা হয়েছিল ৫ মাসের এক শিশুর ভুয়া সাহায্যের জন্য। সেক্ষেত্রে, এই নাম্বারটিকে শিশুটির বাবা জোবায়ের হোসেন এর পার্সনাল বিকাশ নাম্বার বলে জানানো হয়েছিল।
এখন এই পোস্টগুলোতে এই নাম্বারগুলোকে আরাফাত এর বাবা মোতালেব হোসেন এর নাম্বার বলে দাবি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্টওয়াচের পক্ষ থেকে এই নাম্বারগুলোতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে 01884049843, 01732198947, 01968601782, 01798004818 নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
01743965806 নাম্বারটি খোলা পাওয়া গেলেও অপর প্রান্ত থেকে কেউ ফোন ধরেনি।
01643693389 নাম্বারটি প্রথমবার খোলা পাওয়া যায়। অপর প্রান্ত থেকে যিনি কল রিসিভ করেন, তার কথাবার্তায় অসংগতি দেখা যায়। যেমন,তিনি নিজেকে আরাফাত এর ভাই মোতালেব হোসেন বলে পরিচয় দেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ এ ভাইয়ের টিউমার এর চিকিৎসার কথা বলেন। ( অথচ, ফেবুকের পোস্ট অনুযায়ী, মোতালেব হোসেন হলেন আরাফাত এর বাবা। এবং তার ক্যান্সার এর চিকিৎসা হচ্ছে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে।
এছাড়া , ভিডিও কলের মাধ্যমে তার ভাই এর অবস্থা দেখতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে, 01643693389 নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত
মানুষের সংবেদনশীলতাকে পুঁজি করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিদেশী এক তরুণের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে সাহায্যের মিথ্যা আবেদন করছে। ফ্যাক্টওয়াচ এই আবেদনকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?